সন্তানের সাথে সুসম্পর্ক কীভাবে গড়ে তুলবেন?
প্যারেন্টিং এমন এক অভিজ্ঞতা যা কখনো রোমাঞ্চকর অভিযান, আবার কখনো প্রতিদিনের ধাঁধার মতো মনে হয়। যত বই, ব্লগ বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শই অনুসরণ করুন না কেন, একটাই প্রশ্ন সবসময় মনে ঘুরপাক খায়, আমি কি আমার সন্তানের সঙ্গে যথেষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছি।
আজকাল সন্তানেরা একটু বেশি স্বাধীনতা চায় এবং তারা যেন একটু বেশিই সংবেদনশীল তাই খুব সহজেই ঘটে যায়,নানা বিপত্তি। সন্তানকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা বাবা-মা’র জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়ে। আসুন আমরা জেনে নেই এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিভাবে সন্তানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায়।
এমন বাস্তবতায় এখানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো
১. সক্রিয়ভাবে শুনুন?
সন্তানের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করার সবচেয়ে সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো সক্রিয়ভাবে শোনা। এটি শুধু কানে শোনার বিষয় নয়; বরং ফোন দেখা বা আনমনে মাথা নাড়ানোর পরিবর্তে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপার। মনোবিজ্ঞানে সক্রিয় শ্রবণকে কার্যকর যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
এটি শিশুকে বুঝতে সাহায্য করে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান এবং বোঝার যোগ্য পরীক্ষা করুন যখন আপনার সন্তান তাদের। প্রিয় সুপারহিরো বা রাতের স্বপ্ন সম্পর্কে বলতে চায় চোখের দিকে তাকিয়ে শুনুন। তাদের কথা পুনরাবৃত্তি করুন বা সংক্ষেপে বলুন এই মনোযোগ তাদের অনুভব করাবে যে, আপনি সত্যিই তাদের কথায় আগ্রহী।
২. একসঙ্গে শখ গড়ে তুলুন?
শিশুরা অন্যদের সঙ্গে কার্যকলাপে অংশ নিয়ে সম্পর্ক সম্পর্কে শেখে মনোবিজ্ঞানীরা একে যৌথ সম্পৃক্ততা বলেন। যা ইতিবাচক মানসিক সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যদি আপনি কুকি বানান, আপনার সন্তান ডিম ভাঙতে পারে।
আর আপনি ময়দা মাপতে পারেন তারা যদি সংগীত পছন্দ করে, তাহলে একসঙ্গে কোনো ডকুমেন্টারি দেখুন বা বাড়িতে ক্যারাওকে নাইট করুন। এই ধরনের কাজ একসঙ্গে করা স্বাভাবিক ও আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।
৩. নিয়মিত রীতি ও ঐতিহ্য গড়ে তুলুন?
সাপ্তাহিক পিৎজা নাইট, শোবার সময় গল্প বলা, রবিবার সকালে হাঁটা এসবই শিশুদের জন্য আবেগগত নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করে। আমার পরিবারে, আমরা প্রতি রবিবার দুপুরে একসঙ্গে চা পান করি এতে কোনো চাপ নেই। কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নেই, শুধু সময় উপভোগ করি এটি আমাদের ব্যস্ত জীবনের মধ্যে, প্রশান্তির মুহূর্ত এনে দেয়।
৪. আত্মপ্রকাশকে উৎসাহিত করুন?
শিশুরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার উপায় খুঁজে পেলে মানসিকভাবে ভালো থাকে একসঙ্গে জার্নাল রাখা। আপনার সন্তান এবং আপনি একসঙ্গে একটি ডায়েরি রাখতে পারেন যেখানে উভয়েই ছবি আঁকতে বা কিছু লিখতে পারেন। শৈল্পিক প্রকাশ রং করা ছবি আঁকা, মাটির মডেল তৈরি করা যেকোনো সৃজনশীল মাধ্যমকে উৎসাহ দিন।
৫. ধারাবাহিক ও নির্ভরযোগ্য থাকুন?
শিশুরা যখন জানে কী আশা করা যায় তখন তারা নিরাপদ বোধ করে যদি আপনি বলেন বিছানায় যাওয়ার আগে আমরা ১৫ মিনিট খেলবো। তবে সেটি পালন করুন প্রতিদিনের চেক-ইন অভ্যাস গড়ে তুলুন,আজকের দিনে তোমার সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত কী ছিল
৬. ভালোবাসার ভাষা বুঝুন?
ভালোবাসার পাঁচটি ভাষা আছে শব্দের প্রশংসা সেবা, উপহার, গুণগত সময় শারীরিক স্পর্শ আমার সন্তান প্রশংসামূলক শব্দ শুনতে ভালোবাসে। তাই আমি তাদের বলি, “আমি গর্বিত তুমি কতটা সাহসী ছিলে” বা “তোমার চিন্তার ধরনটা দারুণ।
৭. একসঙ্গে কৃতজ্ঞতা চর্চা করুন?
গবেষণা বলে, নিয়মিত কৃতজ্ঞতা চর্চা করা মানুষকে সুখী, আশাবাদী ও সংবেদনশীল করে তোলে কৃতজ্ঞতার জার। একটি জার রাখুন যেখানে সবাই ছোট্ট নোট লিখে ফেলতে পারে যে তারা কিসের জন্য কৃতজ্ঞ।রাতের ধ্যান। ঘুমানোর আগে জিজ্ঞাসা করুন আজকের দিনে কী তিনটি জিনিস তোমাকে খুশি করেছে?
৮. ভারসাম্যপূর্ণ শৃঙ্খলা বজায় রাখুন?
শিশুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা মানে তাদের শাস্তি দেওয়া নয় বরং তাদের জন্য কাঠামো ও দিকনির্দেশনা তৈরি করা। শান্তভাবে ব্যাখ্যা করুন কী ভুল হয়েছে এবং কীভাবে এটি ঠিক করা যায়তাদের বিকল্প দিন। তুমি এখন পড়াশোনা করে পরে খেলতে পার, নাকি আগে কাজ শেষ করবে।
৯. সহানুভূতি ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে গুরুত্ব দিন?
আপনার সন্তানের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের আবেগের নামকরণ করুন তুমি কি এখন রাগান্বিত না কি হতাশ? নিজের অনুভূতি শেয়ার করুন আমি আজ একটু ক্লান্ত লাগছে, কিন্তু তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।
১০. একান্ত সময় দিন?
যত ব্যস্ততাই থাকুক, আপনার সন্তানের জন্য একান্ত সময় বের করুন ক্ষুদ্র মুহূর্তকেও কাজে লাগান
যেমন একসঙ্গে বাজারে যাওয়া। বা রাতে গল্প বলা।আন্তরিক প্রশ্ন করুন আজকের সবচেয়ে মজার বিষয় কী ছিল। আমাদের ভবিষ্যত সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারি। আর সেটি গড়ে ওঠে এই ছোট ছোট সংযোগের মুহূর্তগুলোর মধ্য দিয়ে।
সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব ? ১০টি উপায় জানা আছে কি?
সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ার পদ্ধতি
বাচ্চাকে শেখানোর জন্য আপনাকে গড়ে তুলতে হবে আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব সন্তানের সাথে ভালো বন্ধুত্ব করার কিছু কার্যকরী পদ্ধতি। নিয়ে আজকে আমরা কথা বলবো চলুন জেনে নেই পদ্ধতিগুলো, যার সাহায্যে আপনি গড়ে তুলতে পারেন আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব।
খাবারে আনুন আকর্ষণীয়তা- একদম শৈশব থেকেই যেসব সমস্যা শুরু হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাচ্চারা খেতে চায় না তাই বাচ্চাকে তার মতো খেতে দিন। খাবার টেবিলে বসে খাওয়ান সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব করার প্রধান ধাপই হচ্ছে খাওয়ার টেবিল, বাড়ি ঘুরে কিংবা টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করবেন না।
ক্ষিদে লাগতে দিন প্রয়োজনে দিনের এক বেলার খাবার বাদ দিন, ক্ষিদে পেলে এমনি খাবে বাড়ির তৈরি নানা রকম সুস্বাদু খাবার দিন। উপস্থাপন করুন ভিন্নভাবে, আনুন আকর্ষণীয়তা তবে এক খাবার প্রতিদিন দিবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন স্নাক্স ভাজা-পোড়া টাইপ খাবার যত কম খাওয়াবেন তত ভাল, বেশি বেশি করে সবুজ শাকসবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
মতামতকে গুরুত্ব দিন?
২ থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চাদের নিয়ে আরো একটি গুরুতর সমস্যা হলো বাচ্চা কথা শোনে না। তাই বাচ্চাকে পরিণত মানুষ হিসেবে দেখুন বাচ্চাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন। ‘ও তো বাচ্চা, কিছু বোঝে না/ও কি বুঝবে?’ এ ধরনের মন্তব্য ওদের সামনে করবেন না, আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন।
স্কুলভীতি দূর করুন?
বাচ্চারা যখন স্কুলে ভর্তি হয় তখন অস্বস্তিবোধ করে। এটা খুবই স্বাভাবিক নিজে সঙ্গে করে নিয়ে বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। স্কুলের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন পরীক্ষা নিয়ে তার ভয় এড়াতে তাকে বোঝান পরীক্ষাটি তেমন ভয়ের কিছু না। সাফল্য না পেলে হতাশাজনক কথা বলবেন না ভয় কাটাতে ভয় দেখাবেন না, কাঁটা দিয়ে সব সময় কাঁটা তোলা যায় না।
আপনার পূরণ না হওয়া স্বপ্নগুলো বা চাওয়ার প্রতিফলন সন্তানের মধ্যে দেখার মনোভাব বাদ দিন সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। নিতে সাহায্য করুন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেন না ভাল কাজে উৎসাহ দিন ভেবে বের করুন, আপনি যেসব আনন্দ বা মুহূর্ত। থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন সেগুলো থেকে আপনার সন্তান যেন বঞ্চিত না হয়। বাস্তবতার নিরিখে আপনিই নিতে পারেন আপনার সন্তানের সঠিক যত্ন। মনে রাখবেন, আজকের শিশুর হাতেই আমাদের আগামীর পৃথিবীর ভার।
সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠার ৭ উপায়?
সন্তানের জীবনে বাবা-মা যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বাবা-মায়ের জীবনে সন্তান এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া যেমন একটি বিশাল দায়িত্ব। তেমনি এটি বিশেষ গর্ব ও আনন্দেরও সন্তানের সঙ্গে কিছু কাজ করার মাধ্যমে বাবা। মা শিশুর মনোভাব ও আচরণে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করতে পারেন, গড়ে তুলতে পারেন বন্ধুত্ব।
শিশুর কথা শুনুন?
শিশুরা আবেগপ্রবণ ছোট ছোট জিনিসও তাদের কাছে খুব জরুরি ও গুরুত্বের বিষয় হতে পারে তাদের উদ্বেগগুলো আপনার কাছে তুচ্ছ। মনে হলেও সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন ছোট ছোট জিনিস হঠাৎ করেই বড় কিছুতে পরিণত হয়। এবং বাবা-মা নিশ্চয়ই সবসময় চাইবেন সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের দরজা যাতে খোলা থাকে।
ঘুমানোর সময় কথোপকথন সন্তানের সঙ্গে বন্ধন স্থাপনের জন্য একটি দারুণ উপলক্ষ অবশ্য যে। কোনো সময়ই তাদের মতো হয়ে, তাদের চোখে চোখ রেখে তাদের সব ধরনের কথা শোনা যেতে পারে।
আলিঙ্গন মস্তিষ্কের বিকাশে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে, অক্সিটোসিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়ায়, শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের উন্নতি ঘটায়। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও আচরণকে উৎসাহিত করে যে শিশুরা বেশি আলিঙ্গন পায় তারা নিরাপদ বোধ করে। এবং দেখা যায়, পরবর্তী বয়সে তারা বিভিন্ন আবেগ আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।
পারিবারিক জীবন? বর্তমান বিশ্ব খুব দ্রুতগতির এবং এখানে কাজ ছাড়া কোনো গতি নেই তবে এর মধ্যেই সময় খুঁজে নিতে হবে। কাজের পর সন্তানের সঙ্গে খুব ভালো কিছু মুহূর্ত কাটাতে পারেন, এতে শিশুর মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়।
ন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিলে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অনুভূতি জাগ্রত হয়, পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। শুধু তাই নয়, এটি বাচ্চাদেরকে সারাদিন কাজের পর একটু বিশ্রাম নেওয়া ও নিজেকে সময় দেওয়ার শিক্ষাও দেয়।
একসঙ্গে কিছু পড়ুন?
একসঙ্গে কোনো কিছু পড়া সহজেই বাচ্চাদের সঙ্গে বন্ধন তৈরির অন্যতম সেরা উপায় সন্তানকে একটি ভাল বই পড়ে শোনানোটা । শুধু বিশ্রামের একটি দুর্দান্ত উপায় নয় এটি বাচ্চাদের এই বার্তাও দেয় যে, বাবা-মা তাদের সঙ্গে সময় কাটানো উপভোগ করে।
একসঙ্গে বই পড়া সন্তানের সঙ্গে নতুন কথোপকথনকে উৎসাহিত করে, সৃজনশীলতা তৈরি করে এবং বাবা-মা ও সন্তান সবার জন্য একটি ভালো সময় কাটানোর উপলক্ষ হতে পারে।
একসঙ্গে গেম খেলুন?
প্রতিটি শিশুই আলাদা এবং তাদের সময় কাটানোর প্রক্রিয়াও আলাদা গতানুগতিক ধাঁধা ও অন্যান্য খেলার চেয়ে তারা কোন খেলটি পছন্দ করে। সেটি খেলুন এবং তাদের সৃজনশীলতাকে অনন্য উচ্চতায় নিতে সাহায্য করুন।
আপনি রোল-প্লে করতে পারেন, মজার কোনো পোশাক পরতে পারেন কিংবা অভিনব কিছু করতে পারেন, তাদের পছন্দ অনুসারে ছোট সারপ্রাইজ পার্টিও দিতে পারেন।
ইতিবাচক অনুপ্রেরণা?
সব বাবা-মাই তাদের সন্তানকে বড় হতে এবং জীবনে সফল হতে দেখতে পছন্দ করেন সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সন্তানকে কঠোর পরিশ্রমের জন্য চাপ দিতে গিয়ে বাবা-মায়েরা অনেক সময়, মৌখিকভাবে উৎসাহ দেওয়া এবং অনুপ্রেরণার শক্তি সম্পর্কে ভুলে যান।
সন্তান যখন তাদের বাবা-মার কাছ থেকে শোনে যে সে সাহসী, দয়ালু ও কোমল হৃদয়ের মানুষ, তখন এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে তার ওপর। সুতরাং সন্তানদেরকে আপনি কতটা ভালবাসেন এবং তাদের জন্য কতটা গর্বিত, তা তাদেরকে বলতে কার্পণ্য করবেন না।
সত্যি বলুন?
বাবা-মাও মানুষ এবং তাদেরও ভুল হতে পারে। কোনো ভুল হলে সেটি না লুকিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলুন। আপনার সীমাবদ্ধতার কথা তাদেরকে জানান এটি তাদের মধ্যে সম্মানিত ও মূল্যবান হওয়ার বোধ জাগিয়ে তুলবে। এবং পরবর্তী জীবনে বাড়তি প্রত্যাশা এড়াতে সহায়তা করবে এটি শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে আরও ক্ষমাশীল করে তুলবে। এবং তাদের নিজের ভুলগুলোকে আরও সহজভাবে নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
সন্তানের সঙ্গে প্রতিদিন যে কাজগুলো করা উচিত?
বর্তমানে ব্যস্ততার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তানকে ঠিকমতো সময় দিতে পাররেন না এতে সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকদের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু, চাইলেই প্রতিদিন কিছু বিষয় মেনে চলা সম্ভব। আর এগুলো মেনে চললে সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকের সম্পর্ক ভালো হয় এবং পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয়।
একসঙ্গে পড়া? শিশুদের জন্য বই পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বই পড়া শিশুদের কল্পনা, ভাষা দক্ষতা ও জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করে। প্রতিদিন একসঙ্গে পড়ার জন্য কিছু সময় আলাদা কর রাখুন যদি সন্তানের বয়স কম হয় তাহলে ছবির বই পড়তে পারেন। আর সন্তানের বয়স যদি একটু বেশি হয় তাহলে কোনো গল্পের বই পড়তে পারেন। বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করুন ও গল্পটি নিয়ে আলোচনা করুন, তাহলে তারাও বই পড়াকে উপভোগ করবে।
আউটডোর খেলা? ন্তানের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বাইরে খেলতে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের প্রতিদিন বাইরে সময় কাটাতে উত্সাহিত করুন। তাদের পার্কে খেলতে নিয়ে যান, কিংবা সাইকেল চালানো শেখাতে পারেন আউটডোরের এসব ক্রিয়াকলাপ শারীরিক। ফিটনেস ধরে রাখতে ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়া বাড়াতে সহায়তা করে।
সৃজনশীল সময়?
ছবি আঁকা, কারুশিল্প বা ব্লকপ্রিন্টের মতো সৃজনশীল কাজের জন্য আলাদা সময় বের করুন এগুলো সন্তানের সৃজনশীলতা। দক্ষতা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায় সন্তানের কল্পনা শক্তি বাড়ায় শুধু তাই নয়, সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সৃজনশীল কাজের বিকল্প নেই।
একসঙ্গে খাওয়া? একটি পরিবারে একসঙ্গ খাওয়া কেবল স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাসকেই উত্সাহিত করে না বরং পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে। প্রতিদিন অন্তত একবেলা একসঙ্গে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করুন এসময় সবার সঙ্গে কথা বলুন। সারাদিন কী করল তার খোঁজ-খবর নিন, এগুলো আপনার সন্তানের জন্য ইতিবাচক স্মৃতি হয়ে থাকবে।
শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড?
সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজে যুক্ত করুন যেমন- ধাঁধা সমাধান করা, শিক্ষামূলক গেমস খেলা। বিজ্ঞান পরীক্ষা বা গণিতের দক্ষতা অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে তবে, এগুলো তাদের বয়স ও আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ হতে হবে, তাহলে শেখা মজার ও ইন্টারেক্টিভ হবে।
কাজ ও দায়িত্ব?
বাড়ির চারপাশে পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ ও দায়িত্বগুলোতে আপনার সন্তানকে সম্পৃক্ত করুন এতে তাদের মধ্যে সংগঠিত। টিমওয়ার্ক এবং জবাবদিহিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা বাড়বে ঘর পরিষ্কার করা, টেবিল সেট করা বা কাপড় পরিষ্কার করার মতো তাদের যুক্ত করুন এবং তাদের কাজের প্রশংসা করুন।
কোয়ালিটি টাইম? সন্তানের সঙ্গে মজবুত বন্ধন গড়ে তুলতে তাদের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটান যেমন- একসঙ্গে বোর্ড গেমখেলা। একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া সবাই মিলে সিনেমা দেখা এছাড়াও, তাদের প্রিয় শখগুলো তাদের সঙ্গে নিয়ে পূরণ করতে পারেন, এটি আপনাদের বন্ধনকে মজবুত করবে।
শিশুর জন্য বাসা নিরাপদ রাখবেন যেভাবে? বাসায় শিশু থাকলে অভিভাবকরা শিশুর জন্য বাসাটিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল করে তুলতে চান, কারণ অনেক সময় বাসায়ও ঘটে যেতে পারে নানা দুর্ঘটনা।
২ থেকে ৩ বছরের শিশুদের জন্য বাসা নিরাপদ রাখবেন কীভাবে চলুন জেনে নিই
পাওয়ার আউটলেট ও সুইচ ঢেকে রাখুন?
নাগালের মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক আউটলেটের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেওয়া বাচ্চাদের খুব প্রিয় কাজ, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে অব্যবহৃত আউটলেটগুলোকে কভার, স্টিকার বা প্লাগ দিয়ে এমনভাবে ঢেকে রাখা উচিত, যেন বাচ্চারা সেটি সরাতে না পারে।
অথবা অব্যবহৃত আউটলেট বন্ধ করতে টেপ ব্যবহার করা যেতে পারে নাগালের মধ্যে থাকাসুইচগুলোর ক্ষেত্রেও টেপ ব্যবহার উচিত। সুইচগার্ড বসানো যেতে পারে সুইচগুলোর ওপর, যেন শিশুরা বিপদে না পড়ে।
আসবাবপত্রের তীক্ষ্ণ কোণগুলো ঢেকে রাখুন?
এই বয়সের শিশুরা দ্রুতগতিতে দৌড়াতে গিয়ে বা খেলতে গিয়ে যেকোনো আসবাবপত্র বা টেবিলের তীক্ষ্ণ কোণগুলোতে লেগে ব্যথা পেতে পারে। এক্ষেত্রে কোণ ও প্রান্তগুলো নরম প্যাড, কুশন, তুলা বা সিলিকন কর্নার দিয়ে ঢেকে দিলে শিশুরা গুরুতর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে। দোকানে বা অনলাইনে এগুলো খুঁজে পেতে পারেন, বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও উপকরণের কর্নার প্রটেক্টর পাওয়া যায়।
বিপজ্জনক জিনিস শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন?
সদ্য দৌড়াতে শেখা বাচ্চাদের আগ্রহ থাকে অপরিসীম তাই তাদের হাতের নাগালে প্রসাধনী ডিটারজেন্ট কিংবা ধারালো সামগ্রী রাখা উচিত নয়। তারা এগুলো মুখে দিতে পারে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, সেজন্য বাড়িতে উঁচু তাক বা ক্যাবিনেট তৈরি করে নিতে পারেন। ঠিকভাবে এ কাজটি করতে পারলে, একইসঙ্গে বিপজ্জনক জিনিস শিশুর নাগালের বাইরে রাখা যাবে, এবং বাসাটাও সুন্দর দেখাবে।
অন্য শিশুর সঙ্গে সন্তানের তুলনা করা উচিত নয় যে কারণে?
তোমার বন্ধু তো পারে, তুমি পার না কেন? ওর মতো হতে পার না কিংবা 'পাশের বাসার ছেলেটা অঙ্কে ১০০ পেল, অথচ তোমার নম্বরের কথা কাউকে লজ্জায় বলাই যায় না। কথাগুলো পরিচিত লাগছে লাগাটাই স্বাভাবিক, আমাদের দেশে বাবা-মার কাছ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে শুনতেই বড় হয়।
অনেক সন্তান বাবা-মা শিশুর সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী সন্তান যেন সাফল্য পায় সেটিই থাকে তাদের পরম চাওয়া। সেজন্য কখনো আদরে, কখনো শাসনে সন্তানকে সঠিক পথটা তারা দেখাতে চেষ্টা করেন।
কিন্তু সেই কাজটি করতে গিয়ে কখনো কখনো তারা অন্য শিশুর সঙ্গে সন্তানের তুলনা করে বসেন সেই শিশুটিকে সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করে। সন্তান তার মতো হয়ে উঠার চেষ্টা করবে—এমনটা ভেবে কাজটি করে থাকেন তারা।
কিন্তু অনেক বাবা-মা বুঝতেই পারেন না ভালো করতে গিয়ে তুলনার মাধ্যমে সন্তানের বরং ক্ষতি করছেন, এই তুলনা শিশুর কোমল মনে ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।
চলুন জেনে নিই কী কারণে সন্তানের সঙ্গে অন্য শিশুর তুলনা করা উচিত নয়
শিশু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে?
শিশুরা বাবা-মার কথার প্রতি আস্থা রাখে, তাদের কথা বিশ্বাস করে। বাবা-মা যখন বলেন, ওই শিশুটি তোমার চেয়ে ভালো কিংবা। তুমি ওই শিশুর মতো ভালো কখনো হতে পারবে না তখন সে সেটিকেই সত্যি বলে ধরে নেয়।
চেষ্টা করা সত্ত্বেও অন্য শিশুর চেয়ে সে পিছিয়ে আছে এবং তার ওই শিশুটির মতো মেধা নেই বলে বিশ্বাস করতে শুরু করতে পারে সে। তার মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে সে ধরে নিতে পারে, সে যথেষ্ট উন্নতি করতে পারছে না। এবং বাবা-মার প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম নয় ফলে ধীরে ধীরে তার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে, মনে তৈরি হতে পারে হীনমন্যতা।
অন্যদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করে?
যে শিশুদের বাবা-মা ভালো বলছেন ও যাদের মতো হতে বলছেন, তাদের প্রতি শিশুর ঈর্ষা তৈরি হতে পারে। ওই শিশুদের সে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করতে পারে এবং তাদের প্রতি তার আচরণও পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সহযোগিতার মনোভাবের বদলে শিশুমনে গড়ে উঠতে পারে নেতিবাচক প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। এটি প্রভাব ফেলতে পারে তার ভবিষ্যত শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে।
বাবা-মায়ের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়?
যখন অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করা হয় তখন শিশু অপমানিত বোধ করে চেষ্টা করেও বাবা-মার প্রশংসা পাচ্ছে না। বলে তার মনে তাদের প্রতি তৈরি হতে পারে ক্ষোভ যাদের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, বাবা-মা তাদেরকেই বেশি ভালোবাসেন। বলে মনে হতে পারে তার নিজেকে মনে হতে পারে অবহেলিত সব মিলিয়ে বাবা-মার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দুশ্চিন্তা ও ভয় তৈরি হয়? শিশুদের কোমল মনে দুশ্চিন্তা ও ভয় তৈরি হয় খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে ক্রমাগত তুলনা তার মনে এই ২টি নেতিবাচক অনুভূতি প্রবলভাবে জাগিয়ে তুলতে পারে। যা পরবর্তী জীবনে তাকে ভোগাবে কম বয়সের দুশ্চিন্তা ও ভয়। তার মনে সারাজীবনের জন্য গেঁথে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে বড় কোনো মানসিক সমস্যার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে?
সহপাঠী, কাজিন, বন্ধু, প্রতিবেশি শিশুদের সঙ্গেই সাধারণত চলে বাবা-মায়ের তুলনা তাই এ শিশুদের এড়িয়ে চলতে শুরু করতে পারে। শিশুটি বাবা-মায়ের সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে কথা বলা বা মেলামেশা বন্ধ করে দিতে পারে। সে মনে করতে পারে, ওই শিশুদের সঙ্গে দেখলেই বাবা-মা তুলনা শুরু করবেন।
এ ছাড়া, সামাজিক যোগাযোগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পেছনে তুলনার ফলে তৈরি হওয়া আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিরও ভূমিকা থাকে। শিশু মনে করতে পারে, 'ওরা আমার চেয়ে ভালো ও দক্ষ আমার সঙ্গে হয়তো মিশতে চাইবে না, আমার সঙ্গে হয়তো পড়তে বা খেলতে চাইবে না?
এ বিষয়গুলো ছাড়াও আপনার সন্তানের মনে আরও নানা নেতিবাচক অনুভূতি জন্ম হতে পারে অন্য শিশুর সঙ্গে ক্রমাগত তুলনার কারণে। আপনি হয়তো তার ভালো চেয়ে কাজটি করছেন ভাবছেন সন্তান তুলনা শুনে ওই শিশুটিকে উদাহরণ মনে করে তাকে অনুসরণ করবে। কিন্তু মনে রাখবেন, এভাবে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ফল পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
শিশুর সাফল্য, সুন্দর ভবিষ্যত চাইলে তার সঙ্গে আলোচনা করুন, তাকে বুঝিয়ে বলুন, তার সমস্যা বুঝে সামাধানের চেষ্টা করুন। অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা না করেও আপনার সন্তানের জীবনে ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করা সম্ভব, সুঅভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব সেদিকটায় মনোযোগ দিন।
পোস্ট ট্যাগ?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে আদর্শ স্ক্রিন টাইম মেনে চলার পরামর্শ দেন।
দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার শিশু-কিশোরদের ঘুমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে আরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
লেখকের মন্তব্য?
লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই, Comments করে জানিয়ে দিবেন। সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।
আল্লাহু সর্বশক্তিমান
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url