আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার উপায়?

ভূমিকা?

আল্লাহ তায়ালা প্রতিনিয়ত আমাদের দান করে যান অফুরন্ত দান করেন তিনি। তার ভান্ডারের শেষ হয় না কখনো। পৃথিবী জুড়ে এতো এতো মানুষ, সবাইকে তিনি দান করছেন অগণিত। আল্লাহ তায়ালার দানের বিপরীতে, মানুষের উচিত তার কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া আদায় করা তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাকে ভালোবাসেন।

এই রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া, বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার, নফল নামাজ আদায় করা উচিত। দরিদ্রদের সাহায্য করা, জাকাত ও দান-সদকা দিয়ে গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা উচিত। ১৪ শাবানের দিবাগত রাতে রাত জাগরণ, দোয়া, ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নত আমল।
আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার উপায়

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো। তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন। (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘...শিগগিরই আল্লাহ শোকর আদায়কারীদের প্রতিদান দেবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৪)। তবে আল্লাহর এই কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হয় প্রসন্ন হৃদয়ে, বিনয়-নম্রতার সঙ্গে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করে। যারা এভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। তাদের জীবন হয় সুখময়।

রাসুল (সা.) জীবনের প্রতিটি মূহূর্তে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন যেমন তিনি ঘুম থেকে উঠে বলতেন। সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের মৃত্যু দেওয়ার পর আবার জীবন দান করেছেন, আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্র করা হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১২)

মহানবী সা. যেভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন?

আল্লাহর নেয়ামত অসীম। বান্দার পক্ষে তা গণনা করা সম্ভব নয় আবার সেসব নেয়ামতের শোকর আদায়ের সময়সীমারও অন্ত নেই। বান্দার দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনে আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের শোকর পরিপূর্ণভাবে আদায় করা অসম্ভব। এরপরও বান্দাকে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে যেতেই হবে। কখনও বান্দা আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারবে না। এটিই হলো সৃষ্টিকর্তার বিধান।

এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তা হলে আমিও তোমাদের স্মরণ করব আর তোমরা আমার নেয়ামতের শোকর আদায় করো। আমার অকৃতজ্ঞতা করো না (সুরা বাকারা : ১৫২)। ইসলামী পরিভাষায় আনন্দ বা সুখের কারণে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাকে শোকর বলা হয়। রাসুল সা. একাধিক হাদিসে সেজদায়ে শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন তবে এ সেজদা থেকে উদ্দেশ্য হলো, দুই রাকাত নামাজ পড়া, যাকে সালাতুশ শোকর বা সেজদার নামাজ বলা হয়।

হজরত আবু বকরা (রা.) বলেন, ‘যখন নবী করিম (সা.)-এর নিকট কোনো খুশির সংবাদ বা এমন কিছু পৌঁছত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হতেন। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়তেন।’ (আবু দাউদ : ২৭৭৬)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, সেজদায়ে শোকর বাক্যটির মধ্যে ‘সেজদা’ দ্বারা রূপক অর্থে নামাজকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য ফাতাওয়া অনুযায়ী অজু সহকারে কেবলামুখী হয়ে একটা সেজদা দেওয়ার মাধ্যমেও শুকরিয়া আদায় করা যায়।

সুতরাং কোনো মুমিন বান্দা যদি দুই রাকাত নফল নামাজ দ্বারা শুকরিয়া আদায় করে- তখন তাকে সালাতুশ শোকর বলবে। আর একটা সেজদার মাধ্যমে যদি শুকরিয়া আদায় করে তখন তাকে সেজদায়ে শোকর বলবে, এ উভয় পদ্ধতিতে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যাবে।

সালাতুশ শোকরের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, কিন্তু দুই রাকাতের কম না হওয়া চাই আর তা নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময়ে আদায় করা যাবে না। সালাতুশ শোকরের স্বতন্ত্র কোনো নিয়ম নেই, বরং অন্যান্য নফল নামাজের মতো করেই আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৭/১২৫)

যে দশটি সহজ আমলে বিপুল সওয়াব?

দৈনন্দিন জীবনে আমলের গুরুত্ব অপরিসীম শুধু ফরজ আমলগুলো অনেক সময় যথেষ্ট না হতে পারে। তাই নফল ও অন্যান্য আমল করা চাই কারণ, হাদিসে এসেছে- বান্দার ফরজ আমলে ঘাটতি দেখা দিলে, নফল দিয়ে তা পূর্ণ করা হবে। দৈনিক একশ বার বার সুবহানাল্লাহ পাঠ করা, এতে একহাজার সওয়াব লেখা হয়, একহাজার গুনাহ মাফ করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪/২০৭৩)

আলহামদুলিল্লাহ আমলের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং এটি সর্বোত্তম দোয়াও বটে, (তিরমিজি, হাদিস : ৫/৪৬২; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২/১২৪৯; সহিহ আল-জামে : ১/৩৬২) বা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা— এটি সর্বোত্তম জিকির।‘ (তিরমিজি, হাদিস : ৫/৪৬২; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ২/১২৪৯; হাকিম, হাকিম, হাদিস : ১/৫০৩)

বা সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, এই বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। নবী (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীর সব কিছুর চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪/২০৭২)। দৈনিক একশ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করা। এতে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগিরা) গুনাহ থাকলেও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ আল-বুখারি, হাদিস : ৭/১৬৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪/২০৭১)

আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের দোয়া?

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ভোগ করছে মানুষ সুখে থাক, দুঃখে থাক প্রতি মুহূর্তেই আল্লাহর নেয়ামতে ডুবে আছে। মানুষের জন্য আল্লাহ তায়ালার সব থেকে বড় নেয়ামত হলো শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ। কেউ হাজারো দুঃখে থাকলেও শুধু এতোটুকু ভেবে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রতি মুহূর্তে শ্বাস নেওয়ার শক্তি দিয়েছেন।

শ্বাস নেওয়ার শক্তি না থাকলে শক্তি না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না তাকে লাশ বলা হয়। শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের কথা ভাবলেই আল্লাহর নেয়মতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসে। এছাড়াও মানুষ প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর অগণিত যে নিয়ামত গ্রহণ করছে তার হিসাব করলে গণনা করে শেষ করতে পারবে না। মানুষের আপাদমস্তক পুরোটাই মহান রবের মহানিয়ামতে ভরপুর। জীবনভর গণনা কিংবা চিন্তা গবেষণা করে এ নিয়ামতের প্রকৃত সংখ্যা কখনোই বের করা সম্ভব নয়।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা করো, শেষ করতে পারবে না নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সূরা আন নাহল, আয়াত : ১৮) মানুষের দেহের বাইরে ভোগ্য-অভোগ্য, দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান অসংখ্য নিয়ামত, যা মূলত মহান আল্লাহরই মহা-অনুগ্রহ, মহাদান। এসব নিয়ামতের বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর কাছে চায়। আবার কোনোটি না চাইলেও মহান রব তার বান্দাদের আপন অনুগ্রহে দান করেন।

নেয়ামত বৃদ্ধির দোয়া?

নেয়ামত বৃদ্ধির দোয়া

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে আছে আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য অগণিত নেয়ামত এতো এতো নেয়ামত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তার কোনো শেষ নেই। মানুষের পক্ষে কখনো এই নেয়ামত গুণে শেষ করা সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না, আল্লাহ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু। (সূরা নাহল, আয়াত : ১৮)

অর্থাৎ, আল্লাহর যত নেয়ামত রয়েছে, সেগুলো গুনে শেষ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় সেই নেয়ামতের সমপরিমাণ শুকরিয়া। জ্ঞাপন করাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় এ ক্ষেত্রে আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহই মানুষের ভরসা। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সৃষ্টিজগতের ওপর আল্লাহ তাআলার নেয়ামত এত বেশি যে দুনিয়ার সব মানুষ সমবেতভাবে সেগুলো গুনতে চাইলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। মানুষের নিজের অস্তিত্বই একটি বিশাল জগৎ চোখ, কান, নাক, হাত, পা ও দেহের প্রতিটি গ্রন্থি ও শিরা-উপশিরায় আল্লাহ তাআলার অসংখ্য নেয়ামত রয়েছে, সূক্ষ্মতম ও বিস্ময়কর হাজারো যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত প্রতিটি মানবদেহ।

এই নেয়ামত গুণে শেষ করা যাবে না তবে নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও যথাযথ মূল্যায়ন করলে আল্লাহ তায়ালা তা বৃদ্ধি করে দেন। একইসঙ্গে দোয়ার মাধ্যমে নেয়ামত বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব নেয়ামত বৃদ্ধির জন্য হাদিসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে।

আল্লাহুম্মা ঝিদনা ওয়া-লা তানকুছনা, ওয়া-আকরিম-না, ওয়ালা-তুহিন্না, ওয়া-ত্বিনা- ওয়ালা-তাহরিমনা, ওয়া-ছিরনা ওয়ালা তু-ছির আলাইনা, ওয়া-আরদ্বিনা, ওয়ারদ্বি আন্না।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য (কল্যাণ ও মঙ্গল) বৃদ্ধি করে দাও, কমিয়ে দিওনা, আমাদেরকে সম্মানিত করো, অপমানিত করো না, আমাদেরকে দান করো, বঞ্চিত করো না, আমাদেরকে (কল্যাণের ক্ষেত্রে) অন্যদের উপর প্রাধান্য দাও, আমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দিওনা, আমাদেরকে তুমি সন্তুষ্ট করো এবং আমাদের প্রতি তুমি সন্তুষ্ট হও।
(মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস: ১৯৬১)

যে কারণে নেয়ামতের হিসাব নেওয়া হবে?

পৃথিবী মানুষের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্র। আল্লাহ তাকে দুইভাবে পরীক্ষা করেন বিপদ দিয়ে এবং নেয়ামত দিয়ে। নেয়ামতের পরীক্ষা বিপদের পরীক্ষার চেয়ে কঠিন বিপদের সময় মানুষ আল্লাহর স্মরণ করে তার সাহায্য প্রার্থনা করে। প্রাচুর্যের সরোবরে ডুব দিয়ে খুব কম লোকই আল্লাহর কথা মনে রাখে এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়, তাই নেয়ামতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

পরীক্ষার এই দুটি ধরনের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তাদের ভালো ও মন্দ অবস্থা দ্বারা পরীক্ষা করি, যাতে তারা ফিরে আসে। (সুরা আরাফ, আয়াত ১৬৮)

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারির তবারি (রহ.) বলেন, ‘আয়াতে ভালো অবস্থা দ্বারা উদ্দেশ্য সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ ও সচ্ছলতা। আর মন্দ অবস্থা দ্বারা উদ্দেশ্য দুঃখ-কষ্ট, বালা-মসিবত ও অভাব-অনটন।’ (তাফসিরে তবারি, খণ্ড : ১৩, পৃষ্ঠা : ২০৮-২০৯)

সুখ-শান্তি আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ?

আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের ভেতর আমরা ডুবে আছি পৃথিবীর যত প্রাচুর্য-ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য সবই মানুষের জন্য আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। এসব অনুগ্রহ ভোগ করে মানুষ কি আল্লাহর আনুগত্য করে, না তাকে ভুলে যায় সেটা পরীক্ষা করার জন্য তা সৃজন করেছেন তিনি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে— তা আমি তার জন্য শোভাকর বানিয়েছি, কে ভালো কাজ করে, তা পরীক্ষা করার জন্য।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ০৭)

মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আল্লাহর বিশেষ দান তাই এগুলোর সদ্ব্যবহার করা তার দায়িত্ব আল্লাহর অবাধ্যতায় যেন এসবের ব্যবহার না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। আল্লাহ তার নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি কি তাকে দেইনি দুটি চোখ এবং একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট? (সুরা বালাদ, আয়াত ৮-৯)

যেসব বিষয়ে আল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদ করবেন?

যেসব বিষয়ে আল্লাহ জিজ্ঞাসাবাদ করবেন

মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, অর্থ-সম্মান, সন্তানসন্ততি আল্লাহর নেয়ামত এসবের মোহে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা। আর আল্লাহরই কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার। (সুরা আনফাল, আয়াত ২৮)

বান্দা যখন আল্লাহর মুখোমুখি হবেন তখন আল্লাহপ্রদত্ত প্রাচুর্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন আল্লাহ বলেন এরপর সেদিন তোমাদের নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। (সুরা তাকাসুর, আয়াত ৮)

সেদিন আল্লাহ বলবেন, ‘হে অমুক, আমি কি তোমাকে সম্মানিত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতা বানাইনি? আমি কি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করিনি? আমি কি উট-ঘোড়া তোমার বশীভ‚ত করিনি? আমি কি তোমাকে নেতৃত্বের সুযোগ দেইনি? যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-চতুর্থাংশ গ্রহণ করে প্রাচুর্যের মধ্যে জীবনযাপন করার সুযোগ দিইনি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৯৬৮)

দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য সেদিন আলাদাভাবে জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তর সবকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৬)

যার প্রাচুর্য যত বেশি, তার দায়িত্ব তত বেশি; তাকে জবাবও দিতে হবে বেশি তাই অর্থ-বিত্তে উন্মাদ-উল্লসিত হওয়ার সুযোগ নেই। আলি (রা.) বলেন, ‘হে আদমসন্তান, ধন-ঐশ্বর্যে উল্লসিত হয়ো না দারিদ্র্যে হতাশ হয়ো না। বিপদ-আপদে পেরেশান হয়ো না। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে উন্মত্ত হয়ো না। স্বর্ণ কিন্তু আগুন দিয়েই পরখ করা হয়। (রিসালাতুল মুসতারশিদিন, পৃষ্ঠা : ৮৫)

অপ্রাপ্তির পরীক্ষার চেয়ে প্রাপ্তির পরীক্ষা কঠিন?

আরাম-আয়েশ পালনকর্তাকে ভুলিয়ে দেয়। নেয়ামতের সাগরে ডুব দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা বেশ কঠিন। এ কথারই আশঙ্কা প্রকাশ করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের দারিদ্র্য নিয়ে আমি আশঙ্কা করি না। বরং আমার আশঙ্কা হয়, তোমরা দুনিয়ার প্রাচুর্যের অধিকারী হবে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীরা হয়েছিল আর তোমরা প্রতিযোগিতা শুরু করবে যেমন তারা করেছিল, তখন দুনিয়া তোমাদের ধ্বংস করবে যেমন তাদের করেছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩১৫৮)

এ কথারই সত্যতা নিশ্চিত করে ওমর (রা.) বলেন, ‘বিপদ দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করা হয়, আমরা ধৈর্য ধারণ করি। প্রাচুর্য দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করা হয়, আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি’ (বাসাইরু জাবিত তামইজ ফি লাতাইফিল কিতাবিল আজিজ, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ২৭৪-২৭৫)

পরকালের ব্যাপারে মুমিন উদাসীন নয়?

বিশ্বাসী মানুষ কখনো পরকাল সম্পর্কে উদাসীন হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হতে পারে না মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণের সময় রাসুল (সা.) বলেন, ‘খবরদার! বিলাসিতার ধারেকাছেও যাবে না। আল্লাহর বান্দারা কখনো বিলাসী হতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১০৫)

প্রাচুর্যে মত্ত হয়ে আল্লাহকে অস্বীকার করে বসা কঠিন অপরাধ ক্ষণিকের ক্ষমতা হাতের মুঠোয় পেয়ে মৃত্যু ও পুনরুত্থানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন কুফরি। আল্লাহ এসব অপরাধীকে কঠিন সাজা দেবেন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইতিপূর্বে তারা ছিল আরাম-আয়েশের ভেতর। অতি বড় পাপের ওপর তারা অনড় থাকত এবং বলত, আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও অস্থিতে পরিণত হবো, তখনো কি আমাদের পুনরায় জীবিত করা হবে? এবং আমাদের বাপ-দাদাদেরও, যারা পূর্বে গত হয়ে গেছে?’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ৪৫-৪৮)

সুখ-দুঃখ সবসময় আল্লাহর আনুগত্য?

মুমিন বিপদেও আল্লাহর আনুগত্য করে, প্রাচুর্যেও আল্লাহর আনুগত্য করে কোনো অবস্থাতেই তার পথ থেকে বিচ্যুত হয় না। তাই তার জন্য বিপদও যেমন কল্যাণকর, নেয়ামতও কল্যাণকর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন।

মুমিনের ব্যাপারটি কী চমৎকার! সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর এটি মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য যদি সে সুখ সচ্ছলতা পায় তাহলে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর আর যদি দুঃখ-অনটনের শিকার হয় তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৯৯৯)

পরকালের অফুরন্ত নেয়ামতের তুলনায় দুনিয়ার নেয়ামত নস্যি! তাই ক্ষণিকের প্রাচুর্যের মোহে পরকালের চিরস্থায়ী নেয়ামত ভুলে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং আল্লাহর দেওয়া প্রাচুর্য-ঐশ্বর্য তারই নির্দেশিত পথে ব্যয় করে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।

যে দোয়া কঠিন কাজ সহজ হতে সাহায্য করবে?

পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। মানুষ চেষ্টা করলে যেকোনো কাজ সম্ভব বর্তমান সময়ে এর উদাহরণ অহরহ। অসাধ্য সাধ্য করার যাত্রা অনেক সময় কষ্টকর মনে হয় শুরু করেও পিছিয়ে আসতে চান। হতাশা হওয়ার কিছু নেই, সাহস ও ভরসা রেখে কাজ করা উচিত কাজ সহজ করতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত। কোনো কাজ কঠিন মনে হলে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য পেতে হাদিসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা, লা- সাহলা ইল্লা- মা- জা‘আলতাহূ সাহলান। ওয়া আনতা ইন-শিয়্‌তা জা'আল-তাল হাযনা সাহলান।

অর্থ : হে আল্লাহ আপনি যা সহজ করেন তা ছাড়া কিছুই সহজ নয়। আর আপনি ইচ্ছা করলে সুকঠিনকে সহজ করেন। (সহিহ ইবনু হিব্বান, ৩/২৫

যেকোনো কাজে চেষ্টা-প্রচেষ্টা উপলক্ষমাত্র কাজ সম্পাদনের এবং তা কঠিন বা সহজ করে দেওয়া আল্লাহর কুদরতের অধীন। আল্লাহ তাআলা চাইলে কারো কঠিন কাজ সহজ করে দেন এবং তিনি ইচ্ছা করলে সহজ কাজও কঠিন হয়ে যায়। তাই মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে এই মর্মে দোয়া করেন, ‘আর (হে আল্লাহ) আমার কাজ সহজ করে দাও।’ (সুরা ত্বহা: ২৬)

এ কারণে ছোট-বড় যে কোনো কাজ করার পর আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওফিক চেয়ে দোয়া করা। অসখ্য হাদিসে নেক কাজের তাওফিক লাভের জন্য দোয়া করার কথা বর্ণিত হয়েছে।

দোয়ার সময় পড়ার মতো আল্লাহর প্রশংসামূলক কিছু বাক্য?

মানুষের প্রয়োজনের শেষ নেই। পৃথিবীর জীবন এভাবেই সাজিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা এক প্রয়োজন শেষ হওয়ার আগেই অন্য প্রয়োজন এসে উপস্থিত। অফুরন্ত চাওয়া-পাওয়ার সব পূরণ হয় না অনেক সময় চেষ্টা করেও প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে তার সাহায্য চাওয়া উচিত। তার ভান্ডার থেকে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

কোরআন ও হাদিসে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাইতে উৎসাহিত করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা দান করলে বান্দার আর কোনো অভাব থাকে না। বিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।-(সূরা গাফির, আয়াত, ৬০)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন কোনো আহ্বানকারী আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালা সব সময় তার রহমত ও অনুগ্রহের দরজা খুলে রাখেন। বান্দা তার কাছে চাইলে তিনি খুশি হন, না চাইলে অসন্তুষ্ট হন।

দোয়া করা ও কবুলের কিছু নিয়ম রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো দোয়ার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সা.-এর প্রশংসামূলক বাক্য পাঠ করা। দোয়ার শুরুতে পাঠ করা যায় কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত এমন কিছু বাক্য এখানে তুলে ধরা হলো।

উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু- আলা নাবিইয়্যিনা মুহাম্মাদিও-ওয়াআলা-আলিহি ওয়া-সাহবিহি আজমাঈন।

অমনোযোগী হয়ে দোয়া করলে কবুল হবে?

প্রত্যেক মুসলমান প্রতিদিন কিছু না কিছু আল্লাহ তায়ালার কাছে চেয়ে থাকেন যারা আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাদের কারও দোয়া কবুল হয়। আবার কারও হয় না আর দোয়া কবুল না হওয়ার অবশ্যই কোন না কোনো কারণ রয়েছে।

অনেক মানুষ আছেন, আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করার পরও প্রত্যাশিত বিষয় না পেলে— দোয়া করা ছেড়ে দেন। হতাশ হয়ে অধৈর্য হয়ে পড়েন তাদের জানা থাকা দরকার যে, দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে তিনটি বিষয়ের কোনো একটি দিয়ে থাকেন।

এক. হয়তো প্রত্যাশিত বিষয়টি দিয়ে দেন দুই. দোয়ার বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর থেকে সমপর্যায়ের বিপদ দূর করেন। তিন. দোয়ার সওয়াব আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে তাকে দান করবেন। তাই দোয়ার পর প্রত্যাশার বিপরীত কোনো কিছু ঘটলেও ধৈর্য ধরা অধৈর্য না হওয়া।

আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে। এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব। তুমি যা-ই করে থাক, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না হে আদম সন্তান। তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব।

আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)

এজন্য আল্লাহর কাছে মনোযোগের সঙ্গে দোয়া করা এবং প্রত্যাশা রাখা জরুরি অমনোযোগীভাবে দোয়া করা যাবে না। কারণ, অমনোযোগী হয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন না। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)

কিভাবে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব?

কৃতজ্ঞতা আল্লাহ তাআলার মহান এক নিয়ামত কোরআনে আল্লাহ তাআলা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর বান্দাদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন, কেউ কৃতজ্ঞ বান্দা আর কেউ অকৃতজ্ঞ বান্দা, ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাকে পথ দেখিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে অথবা হবে অকৃতজ্ঞ।

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের ৩ পদ্ধতি?

সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মহান আল্লাহর কুদরত এবং নিয়ামত তিনি সবাইকে ছোট-বড় অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত গুনতে চাও, তাহলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইব্রাহিম: ৩৪) এখানে শোকর আদায়ের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।

এক. নিয়ামতের শোকর আদায়ের সহজ পদ্ধতি নামাজ আদায় করা নামাজ কৃতজ্ঞ বান্দাদের উন্নত স্তরে পৌঁছে দেয়। হজরত মুগিরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) রাত জাগতেন, অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন। নামাজ আদায় করতেন এমনকি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দুই পায়ের গোছা ফুলে যেত। তখন এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এত কষ্ট কেন করছেন?’ তিনি বলতেন, ‘তাই বলে কি আমি একজন শোকরগুজার বান্দা হবো না?’ (বুখারি: ১০৬৩)

দুই. বিভিন্ন দোয়া ও আমলের মাধ্যমে শোকর আদায় করা বিশেষ একটি দোয়া পাঠের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবিকে অসিয়ত করেছেন। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত ধরে বলেন, ‘হে মুআজ, আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরপর তিনি বলেন, আমি তোমাকে কিছু অসিয়ত করতে চাই। তুমি নামাজ আদায়ের পর এটা কখনো ত্যাগ করবে না। তা হলো—আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।’ (আবু দাউদ: ১৫২২)

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের ৩ পদ্ধতি?

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের ৩ পদ্ধতি

সৃষ্টির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মহান আল্লাহর কুদরত এবং নিয়ামত তিনি সবাইকে ছোট-বড় অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত গুনতে চাও, তাহলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইব্রাহিম: ৩৪) এখানে শোকর আদায়ের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।

১ নিয়ামতের শোকর আদায়ের সহজ পদ্ধতি নামাজ আদায় করা। নামাজ কৃতজ্ঞ বান্দাদের উন্নত স্তরে পৌঁছে দেয়। হজরত মুগিরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) রাত জাগতেন, অথবা বর্ণনাকারী বলেছেন, নামাজ আদায় করতেন। এমনকি তাঁর পদযুগল অথবা তাঁর দুই পায়ের গোছা ফুলে যেত তখন এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, এত কষ্ট কেন করছেন?’ তিনি বলতেন, ‘তাই বলে কি আমি একজন শোকরগুজার বান্দা হবো না? (বুখারি: ১০৬৩)

২ বিভিন্ন দোয়া ও আমলের মাধ্যমে শোকর আদায় করা বিশেষ একটি দোয়া পাঠের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবিকে অসিয়ত করেছেন। হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত ধরে বলেন, ‘হে মুআজ, আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরপর তিনি বলেন, আমি তোমাকে কিছু অসিয়ত করতে চাই। তুমি নামাজ আদায়ের পর এটা কখনো ত্যাগ করবে না, তা হলো—আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক। (আবু দাউদ: ১৫২২)

তিন. ছোট্ট বাক্য আলহামদুলিল্লাহ বলা বাক্যটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘সর্বোত্তম জিকির হলো—লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আর সর্বোত্তম দোয়া (কৃতজ্ঞতাসূচক বাক্য) আলহামদুলিল্লাহ। (তিরমিজি: ৩৩৮৩)

লেখকের মন্তব্য?

লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর উপকৃত হয়ে থাকলে অবশ্যই Comments করে জানিয়ে দিবেন,সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url