কাজী নজরুল ইসলামকে অবশেষে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি?

অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাঁকে বাংলাদেশের ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা, হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে। উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে। এবং এটি সবার অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি, ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
কাজী নজরুল ইসলামকে অবশেষে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে তাঁর ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি। প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবার ঢাকায় আনা হয়। তাঁর বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, অন্যান্য। ব্যক্তির সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি–লিট উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে টিএসসি এক সমাবর্তন উৎসবে এ। উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় অসুস্থতার জন্য তাঁকে এ উৎসবে আনা সম্ভব হয়নি।

পরে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলামকে ডি–লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদউল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী নজরুলের উদ্দেশে একটি মানপত্রও পাঠ করেন।

তাহলে এতদিন কি তিনি জাতীয় কবি ছিলেন না? কবিকে বাংলাদেশের মাটিতে আনা হলো। বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হলো, সম্মানসূচক ডি–লিট উপাধি দেওয়া হলো, একুশে পদকে ভূষিত করা হলো।

উনাকে তো জাতীয় কবি হিসেবেই জানে এ দেশের জনগণ বই পুস্তকেও উনি জাতীয় কবি, পত্র। পত্রিকায় বা যে কোন লেখায় লেখা হয় জাতীয কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

১৯৭২ সালের মে মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কাজী নজরুল ইসলামকে। বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। এখন এই সাড়ে বাহান্নো বছর পরে হঠাৎই এই গেজেট কি বুঝে।

আন্দোলনে নজরুলের বারবার ফিরে আসা?

আন্দোলনে নজরুলের বারবার ফিরে আসা

১২ ভাদ্র ছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণবার্ষিকী সাম্প্রতিক গণ অভ্যুত্থানে। নজরুলের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল জনতার প্রাণের ভাষা এ দেশের প্রতিটি। প্রতিরোধ প্রতিবাদে নজরুল কেন হয়ে ওঠেন অপরিহার্য তার তত্ত্বতালাশ।
যুদ্ধ থেকে ফিরে হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬—১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ তখন তাঁর বয়স ২১ বছর।

সাম্প্রতিক গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-জনতা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে। দীর্ঘ ও জুলুমবাজ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে সহিংসতার মাত্রাকে বিবেচনায় নিলে।

বাংলাদেশের ইতিহাস এমনকি তামাম দুনিয়ায় ইতিহাসে এত রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ঘটনা খুব কমই। আছে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম ও অভ্যুত্থানে স্লোগান পোস্টার গ্রাফিতি। ও গান জনগণের বাসনাকে ব্যক্ত করতে দারুণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এগুলোর ভাষিক কথকতার মধ্য দিয়ে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি আর আশা-আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট ও জোরালো চেহারায় ধরা দেয়।

বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের আন্দোলনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে। এর প্রায় প্রতিটি সংগ্রাম ও আন্দোলনে কাজী নজরুল ইসলামের (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬—১২ ভাদ্র।

১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) গান ও কবিতা বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সেটি ১৯৬০–এর দশক হোক। ১৯৯০–এর দশক হোক বা হোক এই ২০২৪ সালের আন্দোলন সব সময় নজরুল। যেন নিত্যনতুন চেহারা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হন।

সব শাসকগোষ্ঠীই কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিবাদী কবিতা ও গানকে নিজেদের মনমর্জিমতো নিস্তেজ করে। রাখার নানা কূটকৌশল করেছে কিন্তু জনতা যখনই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

তখন এই বিদ্রোহী কবির গান–কবিতাই হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পাওয়া জহির রায়হানের।

জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রে দেখা যায়, স্বৈরশাসকের কারাগারে আটক রাজনৈতিক বন্দীরা সমস্বরে গেয়ে উঠছেন। কারার ঐ লৌহ–কবাট/ ভেঙে ফেল কর রে লোপাট/ রক্ত-জমাট শিকল। একই গানের লাইনগুলোকে এবারের রক্তাক্ত গণ–অভ্যুত্থানের দেয়াললিখনেও হাজির হতে দেখা গেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে অন্যান্য জেলা শহরের দেয়ালে–দেয়ালে শিক্ষার্থীদের তুলির আঁচড়ে লেখা হয়েছে।

মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ কিংবা ‘বল বীর বল উন্নত মম শির!’। কেবল দেয়াললিখনেই নয়। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে যোগাযোগের যত নিত্যনতুন তরিকা যুক্ত হয়েছে।

সবখানেই ছিল নজরুলের সৃষ্টির সরব উপস্থিতি যেমন ধরা যাক, ১৯৭১ সালে নজরুলের। গানের এস্তেমাল দেখেছি সিনেমার জগতে, ১৯৯০ সালে দেখেছি গানের আসর বা দেয়াললিখনে। কিন্তু এবারের আন্দোলনে রাজপথের দেয়ালের বাইরে ‘জেন–জি’ প্রজন্মের নতুন মাধ্যমগুলোও ছিল বহুল আলোচিত।

টিকটক, ফেসবুক, রিলস, এক্স (সাবেক টুইটার) ইত্যাদির আবির্ভাবের পর গণপরিসরের বৈপ্লবিক গণতন্ত্রায়ন ঘটেছে। সমাজের বিপুল শ্রেণির মানুষের এমন অভাবিত অংশগ্রহণ মতামত উৎপাদনকারী ও ভোক্তা এই দুই বর্গের সীমারেখা মুছে দিচ্ছে দিন দিন।

সংস্কৃতিচর্চার যে গতি এ যাবৎ ওপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হতো, হালফিল জমানার ঘটনাবলি। সেই গতির উল্টো যাত্রারও সাক্ষ্য দিচ্ছে মূলধারার গণমাধ্যম যেখানে। প্রায়ই শাসকগোষ্ঠীর পক্ষে সম্মতি উৎপাদন করে গিয়েছে, সেখানে নতুন এই পরিসর প্রতিবয়ান তৈরিতে মারাত্মক কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

শাসকগোষ্ঠীর চাপে মূলধারায় উপেক্ষিত ঘটনা বা বয়ান নতুন গণপরিসরগুলো তুলনামূলকভাবে। অসম্পাদিত’ কায়দায় তুলে এনেছে এহেন ‘অসম্পাদিত’ জনপরিসরের বিপজ্জনক। কিছু দিক নিয়েও আলোচনা চলছে তবু মেনে নিতেই হবে যে এবারের আন্দোলনে এর বৈপ্লবিক প্রভাব ঠাহর করা গিয়েছে। দেয়াললিখনের মতো সাবেকি কায়দার চেয়ে আন্দোলনের।

চেতনা ছড়িয়ে দিতে দশ-বিশ সেকেন্ডের রিলস, ফেসবুক বা এক্সের পোস্টার অনেক বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই নতুন ‘সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রসারিত সিনেজগতেও নজরুলের ‘মোরা। ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ ছিল সরব। শুধু সরবই নয়, এগুলোর অনেকাংশই ছিল নজরুলের এই গানকে কেন্দ্র করে।

স্বাধীনতার আগে পরের গণ–আন্দোলনে যেখানে জনতা তাদের অধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। বা ঔপনিবেশিক শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়। সেখানে সমসাময়িক ও সাবেকি সব কায়দা কানুনের ভেতরে।

নজরুল কেন বারবার হাজির হন এবার আমরা দেখেছি, প্রথাগত গণসংগীতের স্থান দখল করে নিয়েছে র‍্যাপ গান। তারপরেও, আমরা দেখছি, বিভিন্ন ব্যান্ড দলের মাধ্যমে নজরুল দিন দিন আরও বেশি মেটালিক চেহারা নিয়ে হাজির হচ্ছেন।

নজরুলের এই হাজিরানার কারণ নজরুলের সাহিত্য ও জীবনের মধ্যে যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই পাওয়া যাবে গণ–আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি থেকেও।

নজরুল–সাহিত্যের বিচারকালে কবি ও সমালোচক হুমায়ূন কবির তাঁর যে কয়টি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছিলেন। তার মধ্যে আমাদের জন্য দুটি প্রসঙ্গ খুব জরুরি বলে মনে হয়, প্রথমত নজরুল ছিলেন অসহযোগ আন্দোলনের কবি।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বাংলার কৃষকসমাজের সঙ্গে তাঁর কুটুম্বিতা অসহযোগ আন্দোলনের কালে। যে তাঁর ব্রিটিশবিরোধী তথা উপনিবেশবিরোধী চেতনার স্ফূরণ ঘটেছিল, সেটির ভাষিক সাক্ষ্য যেমন দিয়েছিল।

নজরুলের কবিতা, তেমনি তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার নাম যেমন লাঙ্গল দেখলে কৃষকসমাজের। সঙ্গে তাঁর সহজাত সম্পর্ক ও রাজনীতি ধরা পড়ে এমনকি তৎকালীন।

পূর্ববঙ্গের বাঙালি মুসলমান বাসিন্দাদের সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক এবং কৃষকের আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্কও ধরা পড়ে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা থেকে।

এই দুটি বৈশিষ্ট্য নজরুলের বারবার ফিরে আসার কারণ অনুসন্ধানে প্রাথমিক সূত্র হিসেবে কাজ করতে, পারে। অসহযোগ আন্দোলনে, যেখানে জনগণ আনুভূমিক কায়দায় রাজপথে।

অংশগ্রহণ করে, সেটি যদি হয়ে থাকে নজরুলের সাহিত্যের অন্যতম প্রেক্ষাপট, তাহলে যখনই জনতা, নিজেদের। রাজনৈতিক সক্রিয়তা নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেছে। তখন অবধারিতভাবে নজরু, প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে কমিউনিজম বা সাম্যবাদের প্রসঙ্গ তাঁর পত্রিকা ও কবিতায় বারবার এলেও সেটি কোনো। জমাটবদ্ধ তত্ত্বের আদলে আসেনি, বরং এসেছে কৃষক–শ্রমিকসহ সব অবহেলিত।

ও নিম্নশ্রেণির মানুষের মুক্তির প্রতি কবির গভীর আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ কারণে নজরুলের কবিতা । কেবল শ্রেণি-রাজনীতির স্লোগানে পর্যবসিত না হয়ে বরং, হয়ে উঠেছে যেকোনো মুক্তিমুখী, রাজনৈতিক সক্রিয়তায় উচ্চারিত।

নজরুলের সৈনিক জীবন যাপন বা তাঁর জীবনের ‘সৈনিক’ পর্যায় তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধে গভীর প্রভাব রেখেছে। বলে সাহিত্য–সমালোচকেরা দেখিয়েছেন ইনসাফের প্রশ্নে সদা অকুতোভয় এবং পুরোনোকে, ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে বন্দী মানুষকে মুক্ত করে।

সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’ মেতে ওঠার বাসনার যে তীব্র প্রকাশ একের পর এক কবিতায় তিনি করে গিয়েছেন। তাতে তাঁর সৈনিকতার দিকটি স্পষ্ট তিনি যে নেতা না হয়ে রাজপথের সৈনিক হতে চেয়েছেন। তাতে কোনো রাখঢাক ছিল না তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন। আমি সেবার নই, আমি যুদ্ধের। আমি সেবক নই, আমি সৈনিক।

নজরুলের এই সৈনিকতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেননা এই সৈনিকতা যাকে আমরা। তাঁর সাহিত্যে বিদ্রোহ বা বিপ্লব আকারে দেখি তার মানে হচ্ছে, জনতার নিত্য সক্রিয়তা।

তাঁর কবিতায় উপমার এস্তেমাল এবং একের পর এক যুদ্ধংদেহী ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের। আবির্ভাব পুরোনো কাঠামো ভেঙে নতুনের দিকে অগ্রসর হওয়ার কাহিনি।

তবে এই ‘ব্যক্তি’দের উপমা থেকে মনে হতে পারে, নজরুল তেমন কোনো মহান পুরুষ। বা উদ্ধারকর্তার অপেক্ষায় আছেন!। আদতে নজরুল কোনো ‘উদ্ধারকর্তা’য় আস্থা রাখেন না বরং তাঁর সৈনিকতা জনতার প্রাত্যহিক ও স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয়তাকেই ইঙ্গিত করে।

অর্থাৎ নজরুল ইসলামের ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সাহিত্যের ভেতরকার মসলায়। এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা জনতার সক্রিয়তাকে কালের ঊর্ধ্বে উঠে সর্বদা ধারণ করতে সক্ষম।

নজরুল যে জনগণের কথা বলেন, তাকে কোনোভাবেই জাতীয়তার পরিচয়ে আবদ্ধ রাখা যায় না। মনে হতে পারে, তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী। পাকিস্তান আমলে তাঁকে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদী আকারে হাজির করার কোশেশও করা হয়েছে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদও তাঁকে নিজের আদলেই গড়ে তোলার চেষ্টাচরিত্র করেছে। কিন্তু মজলুম ও মেহনতি জনতা যখন রাজপথে নেমেছে। তখন নজরুলকে নিয়ে নির্মিত নানাবিধ।

সুরত’ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আন্দোলনের মুহূর্তে নজরুলের ‘জনগণ’এর পরিচয় ফুটে ওঠে কেবল তাদের। সক্রিয়তার ভিত্তিতেই দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও আমরা ভিন্ন বাস্তবতায় পরাধীন।

পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছিলাম এক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা যাবতীয় রাজনৈতিক দল ও কর্মযজ্ঞকে গায়েব করার। চেষ্টা করলেও রাজনৈতিকতা নির্দিষ্ট দল ও মতের বাইরেই আশ্রয় নিয়েছিল।

এর ফলে জনতা যখন নেমে এল রাস্তায়, নজরুলের সৈনিকতার বেশে দাঁড়িয়ে গেল সশস্ত্র। রাষ্ট্রের সামনে, তখন তাকে কোনো নির্দিষ্ট ‘রাজনৈতিক দল’ বা ‘মতবাদ’ দিয়ে চেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াল।

নিকট ইতিহাসে এমন আনুভূমিক আন্দোলনের নজির আমরা দেখতে পাই না এই অবস্থার বহিঃপ্রকাশে নজরুল। সাহিত্য যে আমাদের প্রধান অবলম্বন হয়ে। উঠবে তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে?।

গাজনের বাজনা বাজা!/ কে মালিক? কে সে রাজা?কে দেয় সাজা/ মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?। বলার মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম যে স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক ক্ষমতার কথা বলেন।

তার বাস্তবায়ন দূরে থাক, রাজনৈতিক কল্পনাও আমরা দেখতে পাইনি কিন্তু জনতা যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে। নিজেদের গঠন করতে থাকে তখন তারা নজরুলের এই কল্পনার মধ্যেই নিজেদেরই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।

যেমন, হাসিনার পতনের পর প্রশাসন ও পুলিশবিহীন অবস্থায় জনগণ যেভাবে নিজেদের হেফাজত করতে সংগঠিত হয়ে উঠল। তার মধ্যে দিয়ে নজরুলের উপরোক্ত ‘কল্পনা’র এক বাস্তব রূপই যেন আমাদের সামনে ধরা দিল।

গণ–আন্দোলনে নজরুলের বারবার ফিরে আসার কারণ নজরুল–সাহিত্যে হাজির থাকা ক্ষমতার। বিরুদ্ধে জনগণের সক্রিয়তা ও গণক্ষমতার বৈপ্লবিক সম্ভাবনার মধ্যেই নিহিত,এর প্রেক্ষাপট হিসেবে, রয়েছে তৎকালের অসহযোগ আন্দোলন।

নজরুলের সৈনিক জীবন এবং সমাজের নানা শ্রেণির সঙ্গে তাঁর বা তাঁর সাহিত্যের সম্পৃক্ততা। নজরুলের জীবদ্দশাতেই তাঁর কবিতা ও পত্রিকা ঘন ঘন শাসকগোষ্ঠীর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়েছে।

ফলে যখনই ক্ষমতাকে ত্যক্ত-বিরক্ত করার সুযোগ আসবে গণক্ষমতার সম্ভাবনা দেখা দেবে। এবং যে পরিসর যত বেশি শ্রেণি বা বর্গকে অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হবে। তখনই এবং সে পরিসরেই নজরুল প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন।

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে ‌জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি?

অবশেষে কাজী নজরুল ইসলামকে ‌জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ঢাকা, ২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ৪ মে বাংলাদেশে আসার তারিখ থেকে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক গেজেট প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এটি সকলের অবগতির জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত। বাংলাদেশের জনগণ তাঁকে তাঁর ঢাকায় আগমনের তারিখ থেকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাশা করে আসছিল। উপদেষ্টা পরিষদ এ প্রত্যাশা অনুযায়ী এ প্রস্তাব অনুমোদন করে।

এ বিষয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, এই চাওয়া দীর্ঘ দিনের। অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নজরুল ভক্তরা এই দাবিতে রাজপথ থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত দৌড়েছেন।

অনেক লেখালেখি হয়েছে, জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে মন্ত্রীর টেবিল পর্যন্ত পৌঁছানোর পর ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী রেজিমের এক জনপ্রিয় সংস্কৃতিমন্ত্রী এই দাবি নাকচ করে দিয়েছিলেন সেসব এখন ইতিহাস।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বাসসকে বলেন গণ অভ্যুত্থানের ফসল বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তটি। ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ দেশের সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশা সত্ত্বেও অতীতে রাজনৈতিক। বা অন্য কোনো সরকার এ সিদ্ধান্তটি নেয়নি বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণে এটি সম্ভব, হয়েছেসে জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হত না তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আর ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা হলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভাই, উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকি। আরও আছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতাউর রহমান ভাই এবং তার টিমের কর্মকর্তাদেরকে।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘কবি নজরুল ইন্সটিউটের দায়িত্ব পাওয়ার পর ৪ মাসের মধ্যে একটা দীর্ঘ দিনের দাবি। বাস্তবায়িত করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরীয়া আদায় করছি- আলহামদুলিল্লাহ।

আমি দায়িত্ব পাওয়ার পরই প্রথম জানতে পারলাম যে জাতীয় কবি হিসেবে নজরুলের প্রত্যক্ষ অফিসিয়াল কোন স্বীকৃতি নেই। যেটা আছে সেটা পরোক্ষভাবে নজরুল ইনস্টিটিউট এর অর্ডিন্যান্স হিসেবে, এবং মুখে মুখে প্রচলিত স্বীকৃতি।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘কবি নজরুল ইন্সটিউটের দায়িত্ব পাওয়ার পর ৪ মাসের মধ্যে একটা দীর্ঘ দিনের দাবি। বাস্তবায়িত করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরীয়া আদায় করছি- আলহামদুলিল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দিন নজরুলের কবর জেয়ারত করে পণ করেছিলাম যে এই কাজটা আমি করব। আলহামদুলিল্লাহ সেটা করতে পেরেছি আর নতুন বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে। আছে নজরুলের দ্রোহ প্রেম ও সাম্য চেতনার ওপর। ইনশাল্লাহ এই চেতনাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা কাজ করে যাব।

খুব তাড়াতাড়ি এই খুশি উদযাপন করবেন বলেও জানান কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয়। এবং তাঁর বসবাসের জন্য ধানমন্ডির ২৮ নম্বর (পুরাতন) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

এরপর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

১৯২৯ সালের ১০ ডিসেম্বর অবিভক্ত ভারতের কলকাতার এলবার্ট হলে সমগ্র বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে। নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, এস, ওয়াজেদ আলী। দীনেশ চন্দ্র দাশসহ বহু বরণ্যে ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। জাতীয় কাণ্ডারী’ এবং জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

ইন্তেকাল করেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম?
কবি নজরুল ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ইন্তেকাল করেন,নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন। মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই। এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

তার নামাজে জানাজায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ শরিক হন জানাজার পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ।

মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা মোড়ানো নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান,বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়। পরবর্তীকালে তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে সম্বোধন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮ জারি করা হয়।

Bangladesh on kazi Nazrul এপার বাংলার ভূমিপুত্র কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ইউনুসের বাংলাদেশের?

ঢাকার তরফে জানানো হয়েছে, গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত। প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে।

অবিভক্ত ভারতের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়ায় তাঁর জন্ম বর্তমানে তা পশ্চিম বর্ধমান জেলা। এপার বাংলার সেই ভূমিপুত্র বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামকে এবার বাংলাদেশ দিল জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। শেষমেশ এল ঢাকার তরফে কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা।

র্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ইউনুস সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের, সচিব মহম্মদ আতাউর রহমানের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় অনুমোদিত প্রস্তাব অনুযায়ী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।

পোস্ট ট্যাগ?

বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়েছে আর তা সকলকে জানানোর জন্য গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলামের ১৯৭২ সালের মে মাসে তাঁর ঢাকায় পা রাখার সময় থেকে ধরে তাঁকে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনুস সরকার ফলত বর্ধমানের ভূমিপুত্র কাজী নজরুল ইসলাম। যবে ঢাকা গিয়েছিলেন সেই তারিখ থেকে ধরে তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হল।

লেখকের মন্তব্য?

লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর উপকৃত হয়ে থাকে অবশ্যই Comments করে জানিয়ে দিবেন।

সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url