ডেঙ্গু হলে কী করবেন কী করবেন না?


এই সময় ডেঙ্গু জ্বর বেড়ে যায় ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত সাধারণত, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে। আমারে আর্টিকালের মাধ্যমে তাদেরকে আমি ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপারে কি কি করনীয় এরকম কিছু তুলে ধরলাম।

ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ-জ্বর ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন কী,  করবেন না


কখন হাসপাতালে যেতে হয়?

ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন-নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে-এ’ বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।

বি ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।

সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।

শিশুর ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে, কীভাবে বুঝবেন?

ডেঙ্গু জ্বর বেশি হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সেরোটাইপ শনাক্ত হয়েছে। একাধিক টাইপে বা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে (৩ থেকে ১৪ দিন) ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রথম ১ থেকে ৫ দিন হঠাৎ তীব্র জ্বর (প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), সঙ্গে বমিভাব, বমি, র‌্যাশ (উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি অথবা অসুখের চার থেকে সাত দিনের মধ্যে হামের মতো লাল বিন্দু), হাড়ের জোড়ায় গিঁটে ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথা ইত্যাদি নিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকাশ ঘটে। এ সময় অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। শিশুকে প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।রোগের তীব্রতা থাকে অনেক বেশি।

কিছু লক্ষণ ‘বিপজ্জনক চিহ্ন’ হিসেবে স্বীকৃত যেমন পেটব্যথা, অনবরত বমি, শরীরে পানি জমা, নাক মাড়ি থেকে রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্বলতা, অস্থিরতা, লিভার স্ফীতিÑদুই সেন্টমিটারের বেশি, ল্যাব পরীক্ষায় রক্তে হিমাটোক্রিটের মান বৃদ্ধি, অণুচক্রিকা দ্রুত কমতে থাকা। এ রকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের পাঁচ থেকে সাত দিন সময়কালে ‘মারাত্মক ডেঙ্গুর’ চিহ্নাদি দেখা দিতে পারে। যেমন ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়), শরীরে পানি জমা, নাড়ি দুর্বল, শীতল শরীর (তাপমাত্রা ৯৬.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম), রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমা, অতিরিক্ত রক্তপাত, লিভার এএসটি বা এএলটির মান ১০০০ বা বেশি, অচৈতন্য অবস্থা, হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গে রোগের লক্ষণ প্রভৃতি।

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি তথ্য জেনে নিন?

ডেঙ্গুর জ্বর নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে কারণ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর সংখ্যা একেবারে কম নয়। কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে।

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী?

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

বিশ্রামে থাকতে হবে?

সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ''জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।

কী খাবেন?

প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে।

তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল?

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশা কখন কামড়ায়

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।

পানি জমিয়ে না রাখা?

এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে। এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

ডেঙ্গু হলে কী করবেন, কী করবেন না?

প্রতিবছর ডেঙ্গু জ্বর আসে ভয়াবহ রূপ নিয়ে এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান লক্ষণ হল জ্বর। তাপমাত্রা পরিসীমা ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। জ্বর আসবে আবার কমবে। এর সাথে থাকতে পারে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কথা বলেছেন টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার।

এই সময়ের ডেঙ্গু জ্বর কেন আলাদা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কী করবেন?

২০০০ সালে দেশে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই সময়ে আক্রান্ত প্রায় সবারই সেটা ছিল প্রথম ডেঙ্গু জ্বর। যা প্রাইমারি ইনফেকশন বা প্রাথমিক সংক্রমণ হিসেবে পরিচিত। আক্রান্তদের মধ্যে তখন দ্রুত উচ্চ মাত্রার জ্বর, গায়ে তীব্র ব্যথা, চোখে ব্যথা, ফুসকুড়িসহ নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ দেখা যেত। জটিলতাও হতো কম।

বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর বেশির ভাগই সেকেন্ডারি রোগী, অর্থাৎ তাদের সবাই আগে এক বা একাধিকবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রান্তদের উপসর্গগুলো যেমন কিছুটা ভিন্ন, তেমনি রোগের জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। হালকা, মাঝারি বা তীব্র জ্বর, সঙ্গে অরুচি, বমি ভাব বা বমি, বিশেষ করে পাতলা পায়খানা এ সময়ের ডেঙ্গু রোগীদের বেশি দেখা যায়।

প্রকারভেদে এখন ডেঙ্গু জ্বর তিন ধরনের হয়ে থাকে। গ্রুপ–এ–তে কোনো জটিলতা থাকে না। গ্রুপ–বি রোগীদের ‘ওয়ার্নিং সাইন’ অর্থাৎ বিপৎসংকেত থাকতে পারে অথবা এদের আগে থেকেই হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি বা লিভারজনিত ক্রনিক রোগ ছিল বা এরা উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ, যেমন স্থূলকায়, গর্ভবতী, শিশু বা বয়স্ক রোগী।

আর গ্রুপ–সি হচ্ছে তীব্র জটিল রোগী, যেমন বুকে বা পেটে পানি, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা রক্তচাপ কমে যাওয়া, তীব্র রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে যাওয়া অথবা নির্দিষ্ট একটা অঙ্গ বিকল, যেমন লিভার ফেইলিউর, ব্রেন এনকেফালাইটিস, কিডনি ফেইলিউর নিয়ে আসতে পারে।

গ্রুপ–বি রোগীদের ওয়ার্নিং সাইন বা বিপৎসংকেত আছে কি না, খুঁজে বের করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ার্নিং সাইনগুলো হচ্ছে জ্বরের সঙ্গে পেটে তীব্র ব্যথা, দিনে তিনবারের অধিক বমি বা পাতলা পায়খানা, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া বা ত্বকের রক্তক্ষরণজনিত লক্ষণ।

শ্বাসকষ্ট, শরীর অস্বাভাবিক ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুকে বা পেটে পানি আসা এবং বিশেষ করে জ্বর কমার সময় রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া। এ ধরনের রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিলে জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি-দুটিই অনেকাংশে কমানো যায়।

রক্তচাপ ভালো মানেই সব সময় ভালো না?
সাধারণভাবে একজনের রক্তচাপ যেমন থাকে, ডেঙ্গু জ্বরে তার চেয়ে কমে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ মূলত প্লাজমা লিকেজ (রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বের হয়ে যাওয়া), যা সেকেন্ডারি ডেঙ্গুতে দেখা যায়। ধরা যাক, একজনের রক্তচাপ সাধারণ অবস্থায় থাকে ১৪০/৯০ মিমি মার্কারি। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর রক্তচাপ হয়ে গেল ১২০/৮০ মিমি মার্কারি। যদিও হিসাবমতো এই রক্তচাপ একজন মানুষের জন্য ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু সেই মুহূর্তে এই রক্তচাপই তাঁর জন্য কম।

আবার ধরা যাক, সাধারণ অবস্থায় কারও রক্তচাপ থাকে ১১০/৮০ মিমি মার্কারি। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর রক্তচাপ হলো ১১০/৯০ মিমি মার্কারি। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে রক্তচাপ বেড়েছে, রোগী ভালো আছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অন্য একটি হিসাব। সেটি হলো ‘পালস প্রেশার’। অর্থাৎ ডায়াস্টোলিক আর সিস্টোলিক রক্তচাপের পার্থক্য।

সহজভাবে বলতে গেলে রক্তচাপ হিসেবে যে সংখ্যা দুটি আপনি দেখছেন, সেই দুটির বিয়োগফল। এই বিয়োগফল যদি ২০ বা এর কম হয়, তার অর্থ কিন্তু পালস প্রেশার কমে যাওয়া। তাই এই রক্তচাপকেও ‘ভালো’ ধরে নেওয়া যাবে না। বরং ডেঙ্গু জ্বরের রোগী বাড়িতে থাকলেও ২০ বা এর চেয়ে কম পালস প্রেশার পাওয়া গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো মানেই কি নিশ্চিন্ত?

ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো অনেক সময় ‘নেগেটিভ’ আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষাটি কোন সময় করা হচ্ছে, তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আবার সঠিক সময়ে সঠিক পরীক্ষাটি করা হলেও শতভাগ ক্ষেত্রে রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ না-ও হতে পারে।

বিশেষত সেকেন্ডারি ডেঙ্গু জ্বরে রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে নেগেটিভ আসতে পারে। তাই রোগীর শারীরিক পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা থেকে একজন চিকিৎসক ধারণা করতে পারেন, রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কি না অথবা জটিলতা দেখা দিয়েছে কি না।

প্লাটিলেট কমে যাওয়াই কি ক্ষতির কারণ?

ভাইরাসজনিত যেকোনো জ্বরেই রক্তের প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। অর্থাৎ এক লাখ থেকে দেড় লাখের মধ্যে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরেও প্লাটিলেট কমতে দেখা যায়। সেটা রক্তক্ষরণজনিত ডেঙ্গুতে এক লাখের নিচে নামতে পারে কিন্তু এটিই রোগীর ভালো মন্দের একমাত্র নির্দেশক নয়।

বিপজ্জনকভাবে কমে না যাওয়া অবধি আসলে প্লাটিলেটের এই কমে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণই নেই। বরং একজন চিকিৎসক লক্ষ করেন, হেমাটোক্রিট ঠিক আছে কি না। ১০ শতাংশের বেশি হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়াই নির্দেশ করে জটিলতার সুচনা অর্থাৎ প্লাজমা লিকেজ শুরু হয়েছে।

রক্তের শ্বেতকণিকার মাত্রা কমে যাওয়া কিংবা অ্যালবুমিন কমে যাওয়াও জটিলতার নির্দেশক। বুকের এক্স–রের মাধ্যমে ফুসফুসের পর্দায় পানির উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। পেটের আলট্রাসনোগ্রামে দেখা যায় পেটের পানি। এ রকম অস্বাভাবিক পানি জমা মারাত্মক জটিলতার নির্দেশক।

জটিলতা এড়াতে করণীয়?

সাধারণভাবে হালকা জ্বরকে একটি সাদামাটা উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এই ধারণা বদলে ফেলার সময় এসেছে এখন। বর্ষা বা বর্ষা–পরবর্তী মৌসুমে যখন এডিস মশার উপদ্রব বেশি, ডেঙ্গু জ্বরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেটিও একেবারে প্রথম দিনেই।

জ্বরের প্রথম দিনেই এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে দেওয়া হয় এখন। সঙ্গে একটি সিবিসি। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা নির্ণয়যোগ্য অবস্থায় আসতে বেশ কয়েক দিন সময় লাগে। মোটামুটি সাত দিন। কোন সময়ে কোন ধরনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হলে তা কী নির্দেশ করে,এটিও কিন্তু কেবল ‘পজিটিভ’ বা ‘নেগেটিভ’ দিয়ে বোঝা যায় না।

ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ জ্বরের প্রথম তিন-পাঁচ দিনের মধ্যে সিবিসি ও এনএসওয়ান। অ্যান্টিজেন এবং সাত দিন পর ডেঙ্গু আইজি-এম ও আইজি-জি অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা উচিত। রোগীর নাড়ির গতি ও অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসক আপনাকে। নির্দেশনা দেবেন আপনার চিকিৎসা বাড়িতে করা যাবে, নাকি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

শারীরিক পরীক্ষার ভেতর ‘টরনিকুয়েট টেস্ট’ নামে এমন একটি পরীক্ষাও রয়েছে, যা ‘পজিটিভ’ হলে ডেঙ্গু জ্বর ধরে নেওয়াই যায়। এটি জ্বরের প্রথম দিকে করা হয়। রক্তচাপ মাপার কাফ বেঁধে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেটির চাপ তুলে রেখে এই পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া এক্স–রে বা আলট্রাসনোগ্রামের মতো কোনো পরীক্ষা করাতে হবে কি না, সেটিও জানিয়ে দেবেন চিকিৎসক।

মনে রাখতে হবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাওয়ার পরচিকিৎসা শুরু করা হলে তা থেকে বেরিয়ে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে রোগীর শারীরিক কষ্ট বেশি হয়, মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে। বরং যখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল, কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জটিলতার ইঙ্গিত পাচ্ছেন।

চিকিৎসক, সেই সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ই শুরু করতে হয় নির্দিষ্ট চিকিৎসা, যা এই সময়ে দেওয়া হলেই সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। সময়ের কাজটা সময়ে শুরু করতে পারলে এড়ানো যায় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা।

যাঁদের চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব?

প্রত্যেক রোগীকেই একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। নির্দেশনামাফিক রক্তচাপ মাপাতে হবে, নির্দিষ্ট সময় পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। তাহলে জটিলতার দিকে যেতে থাকামাত্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে এ ছাড়া জ্বরের সাধারণ চিকিৎসা তো চলবেই।

অল্প গরম পানিতে শরীর মুছিয়ে দেওয়া বা গোসল করা যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের রোগীকে অবশ্যই প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে পুষ্টি ও লবণসমৃদ্ধ তরল, যেমন খাওয়ার স্যালাইন, ডাব, ফলের রস, শরবত, ভাতের মাড় ইত্যাদি। প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে কিন্তু অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক সেবন করা যাবে না।

রোগী যদি আগে থেকেই অ্যাসপিরিন বা এমন কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন, যা রক্ত পাতলা করে, তাহলে চিকিৎসককে জানিয়ে রাখুন। এটি বন্ধ রাখা এবং পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। যেসব রোগীর চিকিৎসা বাড়িতে করানো সম্ভব, সেসব রোগী ও তাঁদের স্বজনদের কিন্তু কিছু বিপদচিহ্নও চিনে রাখতে হবে।

ডেঙ্গু হলে কি কি ক্ষতি হয়?

গত বছর থেকে ডেঙ্গু জ্বরের নতুন একটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হল লিভার আক্রান্ত হওয়া, এতে রোগী দূর্বল বোধ করে। খেতে পারে না বমি হয় লিভার ব্যথা করে এটি সাধারণত জ্বর কমে যাওয়ার পর পর দেখা দেয়। এবং ৫-৭ দিন থাকতে পারে এই রোগে গত কয়েক বছর বেশ কিছু মানুষ মারা যায়।

ডেঙ্গু হলে কি ওষুধ খেতে হবে?

অধ্যাপক তাহমিনা বলেন ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি। প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম।

কি খেলে ডেঙ্গু ভালো হয়?

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকায় স্যুপ রঙ চা, সুজি, সেমাই, ফলের রস, বার্লি, ভাতের মাড় বা যদি ভাতসহ স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন। সেটাই খাবেন রোগীর খাবার উপযোগী করে খাবার তৈরি করে দিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধাপ কি কি?

ডেঙ্গু 5-7 দিনের সাধারণ ইনকিউবেশন পিরিয়ডের পর আকস্মিকভাবে শুরু হয় এবং কোর্সটি 3টি পর্যায় অনুসরণ করে: জ্বর, গুরুতর এবং সুস্থ হওয়া ।

ডেঙ্গু রোগ কত দিন থাকে?

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টাকে বলা হয় সংকটকাল। কারণ, ডেঙ্গু রোগজনিত বিভিন্ন জটিলতা এ সময়ে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

ডেঙ্গু হলে সহবাস করা যাবে কি না?

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই। এটা বাতাসে ছড়ায় না, শুধু ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যে কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের এন্টিবায়োটিক?

ডেঙ্গু জ্বরের এন্টিবায়োটিক

ডেঙ্গু সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। তাহলে আপনার অ্যাসিটামিনোফেনের সাথে ব্যথা উপশমকারী ব্যবহার করা উচিত এবং অ্যাসপিরিনযুক্ত। ওষুধগুলি এড়ানো উচিত যা রক্তপাতকে আরও খারাপ করতে পারে এছাড়াও আপনার। বিশ্রাম করা উচিত, প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা উচিত এবং আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর কতদিন শররে থাকে?

বেশিরভাগ লোকই প্রায় 4-5 দিনের জন্য ভাইরেমিক হয়, তবে ভিরেমিয়া 12 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে । মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক পদ্ধতিতে মশার ভেক্টর জড়িত। তবে প্রসূতি সংক্রমণের (গর্ভবতী মা থেকে তার শিশুর মধ্যে) হওয়ার সম্ভাবনার প্রমাণ রয়েছে।

ডেঙ্গু হলে ক্লান্তি কতদিন থাকে?

সিঙ্গাপুরের আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে 118 জন প্রাপ্তবয়স্ক ডেঙ্গু মামলার 9%, প্রধানত DENV-1 বা DENV-3 দ্বারা সংক্রামিত, তীব্র অসুস্থতার পর্বের (2) পর অন্তত 3 সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রমাগত ক্লান্তি, তন্দ্রা এবং ক্ষুধা হ্রাস পেয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের পর কি মদ খাওয়া যাবে?

এই পদার্থটি পেশী কোষের ভাঙ্গনের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেইসাথে ডেঙ্গু জ্বরের পরে। শরীরের পুনরুদ্ধারের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে অ্যালকোহল কফি ওয়াইন বা অ্যালকোহলযুক্ত ।পানীয়ের মতোই স্বাভাবিক মানুষ এবং সদ্য ডেঙ্গু থেকে সেরে উঠেছেন উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য সহজাতভাবে ক্ষতিকর।

ডেঙ্গু কি দুইবার হতে পারে?

হ্যাঁ ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্তত চারটি সংস্করণ (স্ট্রেন) থাকার কারণে আপনি একাধিকবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। আপনি সাধারণত প্রথম যে স্ট্রেনের সাথে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার থেকে আপনি অনাক্রম্য হয়ে উঠবেন এবং আবার এটি পেতে পারবেন না। কিন্তু এর পরে আপনি অন্য তিনটি স্ট্রেনের একটিতে অসুস্থ হতে পারেন।

পোস্ট ট্যাগ?

এখন যেহেতু ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ আগের মত নেই তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কারও হালকা জ্বর, ডায়রিয়া বা কাশি হচ্ছে। যার জন্য অনেকে বুঝতে পারে না যে তার ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তাই অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে শারীরিক অবস্থার স্বাভাবিক জীবনযাপনের।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গু শক এ যাওয়ার ঝুঁকি একদমই কমে আসে। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যায়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০ শতাংশ, কিন্তু যদি সঠিক সময়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা। নিতে পারে তাহলে মৃত্যু ঝুঁকি একদমই কমে আসে ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

লেখকের মন্তব্য?

সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম,হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url