বিশ্বের সবচাইতে বড় দশটি তেলের খনি?
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেলের মজুত আছে ভেনেজুয়েলায়। এরপর রয়েছে সৌদি আরব, কানাডা ও ইরানে। তবে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। আবার তেলের বড় রপ্তানিকারক দেশ হলো সৌদি আরব। রাশিয়াও বড় তেল উৎপাদনকারী এবং অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ।তেলের খনি অবশ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এসব খনির কোনো কোনোটি বিশাল কোনোটি আবার একেবারে ক্ষুদ্র। বেশি ছোট খনিতে আবার তেল উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয় না। বড় তেলের খনি খুঁজে পেলে তা সেই দেশের অর্থনীতিকেই বদলে দিতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনিগুলোর বেশির ভাগই সেই সব দেশে অবস্থিত যারা তেলের আন্তর্জাতিক বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ।
১ গাওয়ার তেলক্ষেত্র সৌদি আরব
এটি দেশটির পূর্ব প্রদেশে অবস্থিত। এই খনিটি লম্বায় ২৮০ কিলোমিটার ও চওড়ায় ৩০ কিলোমিটার। ১৯৪৮ সালে গাওয়ার খনি আবিষ্কৃত হয়, আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৫১ সালে। সৌদি আরামকো এটির মালিক। গাওয়ার খনি থেকে প্রতিদিন ৫০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই খনিতে তেলের সম্ভাব্য মজুত ৭ হাজার ১০০ কোটি ব্যারেল।
২ অসবার্গ নরওয়ে
এটি উত্তর সাগরে অবস্থিত একটি তেল খনি, যার ওপরে অংশ রয়েছে গ্যাস ক্ষেত্র। নরওয়ের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় বার্জেন শহরের ১৪০ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে এটির অবস্থান। নবম শতকের একটি ভাইকং জাহাজের নামে এই খনিটির নামকরণ করা হয়েছে, আবিষ্কার করা হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এটি থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখ ৭৮ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা যায়। এই খনির মূল পরিচালনাকারী কোম্পানি হলো স্টেটঅয়েল। সঙ্গে রয়েছে পেটোরো, টোটাল, এক্সমোবিল ও কনোকোফিলিপস।
৩ বলিভার কোস্টাল ফিল্ড ভেনেজুয়েলা
দেশটির ভুখণ্ডে এই তেল ক্ষেত্রের আবিষ্কার হয় ১৯১৭ সালে আর উৎপাদনে যায় ১৯২২ সালে। দক্ষিণ আমেরিকায় এটি সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্র, যেখানে কূপের সংখ্যা ৭ হাজার। লেক মারাকাইবোর ৩৫ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে এগুলোর অবস্থান। এই তেলক্ষেত্রে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল তেল আছে বলে ধারনা করা হয়। উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিদিন ২৬ লাখ ব্যারেল।
৪ ফিউদোরোভস্কোই ফিল্ড রাশিয়া
পশ্চিম সাইবেরিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গের দক্ষিণে এই তেলক্ষেত্রের অবস্থান। আবিষ্কার হয়েছে ১৯৭১ সালে। এই খনির মজুত এখন অনেকটাই কমে গেছে। তবে এখনো এটি থেকে ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদিত হয়।
৫ বুরগান ফিল্ড কুয়েত
এই তেল ক্ষেত্রের খোঁজ পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালে। কুয়েতের দক্ষিণ মরুভূমিতে এর অবস্থান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যান্ডস্টোন তেলের খনি বলে বিবেচিত। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ইরাকি সেনারা পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে এই তেলক্ষেত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই ঘটনায় এটির বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়নি বা মজুত কমেনি। বুরগান ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেল।
৬ রুমাইলা তেলক্ষেত্র ইরাক
১৯৫৩ সালে এই তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়। এটির মালিক দেশটির সরকার হলেও বিপি বা ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম ও চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে ইজারা দেওয়া আছে। বর্তমানে রুমাইলা ক্ষেত্র থেকে ১৩ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল। রুমাইলা তেলক্ষেত্রে কূপের সংখ্যা ২৭০টি। আগামী দিনে উৎপাদনক্ষমতা ২১ লাখ ব্যারেলে বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
৭ সামোতলর ফিল্ড রাশিয়া
লেক সামোতলর এলাকায় ১ হাজার ৭৫২ বর্গকিলোমিটারজুড়ে এর অবস্থান। আকারের দিক থেকে এই তেলক্ষেত্র রাশিয়ার সবচেয়ে বড়। ১৯৬৫ সালে এটি খুঁজে পাওয়া যায় আর এটি উৎপাদনে যায় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে এই খনি থেকে ৮ লাখ ৪৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। সম্ভাব্য মজুত ৪০০ কোটি ব্যারেল। উৎপাদন শুরুর পর এই খনি থেকে ২৬০ কোটি টন তেল উত্তোলন করা হয়েছে।
৮ প্রিবস্কোই ফিল্ড রাশিয়া
আবিষ্কার হয় ১৯৮২ সালে আর এটি উৎপাদনে আসে ২০০০ সালে। গাজপ্রম নেফট ও রসনেফট যৌথভাবে এটির মালিক ও পরিচালনা করে। বর্তমানে এই তেলক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন ৬ লাখ ৮৪ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয়।
৯ প্রুডহো বে যুক্তরাষ্ট্র
আলাস্কার নর্থ স্লোপে ২ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ একরজুড়ে এটির অবস্থান। এই তেলক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড়। ১৯৬৮ সালে এটি আবিষ্কৃত হলেও উৎপাদনে আসে ১৯৭৭ সালে। বিপি পরিচালিত এই খনিতে অন্য অংশীদার হলো এক্সনমবিল ও কনোকোফিলিপস আলাস্কা। প্রতিদিন ৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন হয় এখান থেকে। আর সম্ভাব্য মজুত ২ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেল।
১০ মাজনুন তেলক্ষেত্র ইরাক
দক্ষিণ ইরাকের বসরা শহরের কাছে এই খনির অবস্থান। বিশ্বে যেসব খনি তেলে একেবারে পরিপূর্ণ, সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাজনুন তেলক্ষেত্র। এটির সম্ভাব্য মজুত ১ হাজার ২৬০ কোটি ব্যারেল। ১৯৭৫ সালে ব্রাজিলের কোম্পানি ব্রাসপেট্রো এটি আবিষ্কার করে। মাজনুন শব্দের অর্থ হলো পাগলাটে। প্রতিদিন এই ক্ষেত্র থেকে ৫ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়।
বিশ্বের বৃহত্তম খনিজ তেল উত্তোলক কেন্দ্রের নাম কি
বিশ্বের বৃহত্তম খনিজ তেল উত্তোলক কেন্দ্র হল পারস্য উপসাগর। এই অঞ্চলে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক খনিজ তেল মজুদ রয়েছে। পারস্য উপসাগরের বৃহত্তম তেল উত্তোলক দেশগুলি হল সৌদি আরব ইরান, ইরাক কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।পারস্য উপসাগরের তেল উত্তোলনের ইতিহাস দীর্ঘ।
১৯০৮ সালে ইরানের মাশহাদ শহরের কাছে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে এই অঞ্চলে তেল উত্তোলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়।পারস্য উপসাগরের তেল উত্তোলন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল থেকে উত্তোলিত তেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
তেল রপ্তানির মাধ্যমে এই অঞ্চলের দেশগুলি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।পারস্য উপসাগরের তেল উত্তোলন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই অঞ্চলের তেল সম্পদকে কেন্দ্র করে অনেক দেশ পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়াও তেল উত্তোলন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে অনেকে মনে করেন।পারস্য উপসাগরে এক যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নিয়েছে পাকিস্তান ও কাতার।
কাতারের হামাদ বন্দরকে কেন্দ্র করে এই নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে সোমবার পাকিস্তানের নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়।বিবৃতিতে বলা হয় কাতার নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজ হুয়ার দামাশ ও কানের সাথে পাকিস্তান নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ আলমগীর ও আজমত এই যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেয়। কাতারের বিমান বাহিনীর একটি বিমানও এ দ্বিপাক্ষিক যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়।
এই বিবৃতিতে বলা হয় দু দেশের নৌবাহিনীর মধ্যেকার দ্বি পাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার সাথে সাথে পারস্পারিকদুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এই মহড়া আরো ঘনিষ্ঠ করবে বলে বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। নৌ সহযোগিতা ও তথ্য বিনিময় বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে যৌথ এই নৌ মহড়ার আয়োজন করা হয়। এতে আরো বলা হয় পাকিস্তান ও কাতার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ এক আন্তরিক সম্পর্কে আবদ্ধ।
লেখকের মন্তব্য
সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম,হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url