পোষা প্রাণী রাখার 5 টি সুবিধা?
বাসাবাড়িতে প্রাণী পুষে কী লাভ এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে এককথায় বলতেই পারি। সবকিছু কি আমরা শুধু লাভের জন্যই করি তারপরও জানার জন্য আমরা। পোষা প্রাণী আমাদের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পোষা প্রাণীর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
বলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট সাইফ হোসেন খান। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে প্রাণী পোষার দারুণ ইতিবাচক কিছু প্রভাবের কথা জানালেন এই চিকিৎসক। চলুন জেনে নিই প্রাণী পোষার তেমন কিছু লাভের কথা।পোষা প্রাণী তো কেবল শখের একটা জিনিস বা খেলনা নয় প্রাণী পোষার অর্থ হলো জলজ্যান্ত একখানা প্রাণের দায়িত্ব গ্রহণ।
ওকে সময়মতো খাবার দিতে হবে সময় দিতে হবে এমনকি ওর মলমূত্রও পরিষ্কার করে দিতে হবে। রোজকার এই দেখভালের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে আপনি শারীরিকভাবে ফিট থাকবেন। বিড়াল কুকুরের মতো প্রাণীর সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলার সুযোগও আছে। বিশেষত কুকুর থাকলে তো আপনার ওকে নিয়ে হাঁটতে যেতেই হবে রোজ।
এভাবে আপনার শরীরের পেশিগুলোও থাকবে সচল। হাঁটাহাঁটি দৌড়ঝাঁপে আপনার কায়িক পরিশ্রম হবে। বেশ খানিকটা ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। আপনার পক্ষে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস হৃদ্রোগ স্ট্রোক দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে আপনার এই রোজকার কার্যকলাপ।
আর রাজ্যের কাজ সেরে ক্লান্ত শরীরে আপনি যখন ঘরে ফেরেন তখন আপনার অপেক্ষায় থাকা পোষা প্রাণীটি যদি খুশিতে ডগমগ হয়ে আপনার দিকে ছুটে আসে আপনি অবশ্যই ক্লান্তিও কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজে।পোষা প্রাণী তো কেবল শখের একটা জিনিস বা খেলনা নয় প্রাণী পোষার অর্থ হলো জলজ্যান্ত একখানা প্রাণের দায়িত্ব গ্রহণ। ওকে সময়মতো খাবার দিতে হবে সময় দিতে হবে এমনকি ওর মলমূত্রও পরিষ্কার করে দিতে হবে।
রোজকার এই দেখভালের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে আপনি শারীরিকভাবে ফিট থাকবেন। বিড়াল কুকুরের মতো প্রাণীর সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলার সুযোগও আছে। বিশেষত কুকুর থাকলে তো আপনার ওকে নিয়ে হাঁটতে যেতেই হবে রোজ। এভাবে আপনার শরীরের পেশিগুলোও থাকবে সচল। হাঁটাহাঁটি দৌড়ঝাঁপে আপনার কায়িক পরিশ্রম হবে।
বেশ খানিকটা ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। আপনার পক্ষে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস হৃদ্রোগ স্ট্রোক দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে আপনার এই রোজকার কার্যকলাপ। আর রাজ্যের কাজ সেরে ক্লান্ত শরীরে আপনি যখন ঘরে ফেরেন তখন আপনার অপেক্ষায় থাকা পোষা প্রাণীটি যদি খুশিতে ডগমগ হয়ে আপনার দিকে ছুটে আসে আপনি অবশ্যই ক্লান্তিও কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজে।
কমায় মানসিক চাপ ও হতাশা
জীবনের নানান বাঁকে নানান ঘটনার কারণে আমাদের মনমেজাজ বিগড়ে গিয়ে থাকে। বহুবিধ মানসিক চাপে পিষ্ট হই আমরা। পোষা প্রাণীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত কিন্তু সব রকম মানসিক চাপ সামলাতে সহায়ক। বিগড়ে যাওয়া মনমেজাজও শান্ত করে পোষ্যরা। হতাশ হয়ে পড়া মানুষটিও নতুনভাবে সবকিছু সামলে নেওয়ার মতো মনের জোর ফিরে পান। পোষা প্রাণীর আদুরে পরশ মানুষের জন্য ইতিবাচক।
কমে একাকিত্বের ঝুঁকি
পরিবারে সবাই আছেন তবু কেউ কেউ কিন্তু একলা একাকিত্ব মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একসময় এই একলা মানুষদের সঙ্গী হয়ে ওঠে বিষণ্নতা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়তে পারে। অথচ পোষা প্রাণী একজন মানুষকে একলা হয়ে পড়তে দেয় না।
জীবনে থাকে রুটিন
পোষা প্রাণী থাকলে জীবনের ছন্দপতনের ঝুঁকি কমে যায় পরিস্থিতি যেমনই হোক জীবন চলে। একটা নির্দিষ্ট ধারায় ফলে রাতে আপনার ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আবার চাইলেও কিন্তু অতিরিক্ত বেলা অবধি ঘুমাতে পারবেন না। কারণ একটা প্রাণী আপনার ওপর নির্ভরশীল তার দেখভালের জন্য আপনাকে ঠিক সময়ে উঠতেই হবে।
আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যাক ধরুন আপনার বাড়িতে আজ ঝগড়া হয়েছে। এর পর থেকে দুপক্ষের কথা বন্ধ কেউই হয়তো ইগো ভেঙে কথা বলতে এগোতে পারছেন না। এমন অবস্থাতেও কিন্তু পোষা প্রাণীর সঙ্গে কথোপকথনে চলতে পারে দুপক্ষের পরোক্ষ আলাপ। এভাবে দুপক্ষই সহজ হয়ে আসতে পারেন।
শিশুর সামাজিক বিকাশ
যেসব বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকে সেসব বাড়ির শিশুরা সামাজিকভাবে দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে। পোষা প্রাণীর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় শিশুর কোমল মনে গভীর ছাপ পড়ে। তার মধ্যে বিকশিত হয় দয়া পরোপকার ও মহত্ত্বের মতো চমৎকার গুণ।
পোষা প্রাণীর যত্ন যেভাবে নেবেন
এখন আবহাওয়াটা বেশ অদ্ভুত এই বৃষ্টি তো এই চিটচিটে গরম এই আবহাওয়ায় আদরের পোষ্যকে। সুস্থ রাখতে চাই বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা ঢাকার প্রাণিকুল অ্যানিমেল ওয়েলনেস সেন্টারের ।চিকিৎসক তানভীর আসিফা বলেন বিড়াল কুকুরের ক্ষেত্রে বাড়ির সবচেয়ে ঠান্ডা স্থানটি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো। তবে সরাসরি রোদ পড়ে এমন জায়গায় রাখা যাবে না। বাতাস চলাচলের জন্য জানালা খোলা রাখতে পারেন জানালায় অবশ্যই নেট থাকতে হবে। নইলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে পাখির ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরে একটা বাটিতে পানি অথবা খাঁচার ওপর একটা কাপড় ভিজিয়ে দিয়ে রাখতে পারেনসে ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরটা ঠান্ডা থাকবে।
খাবার ও পানি
এ সময় পোষা প্রাণীর খাবারের রুচি অনেকটাই কমে যায় রুচি ফেরাতে দৈনন্দিন খাবারের পাশাপাশি ।১ থেকে ২ চামচ টক দই দেওয়া যেতে পারে বলে জানালেন তানভীর আসিফা। বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া পেঁপে গাজর ইত্যাদি সেদ্ধ করেও পোষা প্রাণীকে দিতে পারেন। তবে টিনজাত খাবার এবং সব ধরনের শুকনা খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন তিনি।
এই গরমে পানিশূন্যতা রোধে পোষা প্রাণীর কতটুকু পানি পান করা প্রয়োজন তা নিয়ে কথা বললেন ঢাকার কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক লুৎফুর রহমান। প্রায় ছয় বছর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি। লুৎফুর রহমান বলেন প্রাণীর ওজনের ওপর পানির পরিমাণ নির্ভর করবে। ৪০০ মিলিলিটার থেকে শুরু করে ১ লিটার পর্যন্ত পানি একটি বিড়াল গ্রহণ করতে পারে।
কুকুরের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭০০ মিলিলিটার। কুকুর বিড়াল প্রচলিত পদ্ধতিতে না ঘামলেও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি ভূমিকা রাখে। লক্ষ্য রাখতে হবে পোষা প্রাণী যেন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি গ্রহণ করে।
অনেক সময় শুধু পানি খেতে না চাইলে মাছ, মাংস সেদ্ধ করা পানি দেওয়া যেতে পারে জানান তিনি।পাখির খাবারের ক্ষেত্রে তেলজাতীয় বীজের পরিবর্তে সবজি বা শাক দেওয়া যেতে পারে।পোষা প্রাণীর পানির পাত্র দুই ঘণ্টা পরপর বদলে দেওয়া উচিত।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
পোষা কুকুর বা বিড়ালকে এক দিন পরপরই গোসল করানো যেতে পারে জানান লুৎফুর রহমান। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন দ্রুতই গা শুকিয়ে দেওয়া হয়। পার্সিয়ান বা বিদেশি জাতের লম্বা পশমের বিড়ালের পশম ছোট করে দেওয়া যেতে পারে। গরমে কিছুটা আরাম পাবে। এ সময় পোষা প্রাণীর গায়ে পরজীবী কীট হয়।
এ ধরনের পরজীবী থেকে বাঁচতে গোসলের পাশাপাশি বিড়াল-কুকুরের লোম আঁচড়ে দিতে হবে।পাখির ক্ষেত্রে খাঁচার ভেতরে একটা বড় বাটিতে পানি দিয়ে রাখা যেতে পারে। পাখি চাইলে নিজেই প্রয়োজনে গা ভিজিয়ে নিতে পারবে।
অসুখ ও তার প্রতিকার
আমরা যেমন অসুস্থ হই, পোষ্যরাও হয়। ওদেরও প্রয়োজন চিকিৎসা এবং আন্তরিক সেবা। গরমে বিশেষ করে পোষা প্রাণীদের পানিশূন্যতা অতিরিক্ত শারীরিক তাপমাত্রা জ্বর এবং হজমে সমস্যা দেখা যায়। এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ঠান্ডা তোয়ালে দিয়ে গা মুছে দেওয়া যেতে পারে। তবে সরাসরি বরফ না দেওয়ার পরামর্শ দিলেন তানভীর আসিফা।
টিকাদান
টিকা মূলত শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি করে শরীরকে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে। ঋতুভেদে নয় বরং নির্দিষ্ট বিরতিতে বিড়াল কুকুরকে রোগমুক্ত রাখতে টিকা দিতে হবে। লুৎফুর রহমান বলেন সাধারণত আট সপ্তাহ বয়স থেকেই বিড়াল এবং কুকুরকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া যায়।
১২তম সপ্তাহে বুস্টার ডোজ দেওয়ার পর প্রত্যেক বছরই পোষা প্রাণীকে টিকা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন পশু হাসপাতাল থেকে টিকা দেওয়া যাবে।
পোষা প্রাণী ও আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য
ভালোবাসার বিশালতা আমাদের কল্পনাকেও হার মানায় বলা হয় মানুষ জন্ম নেয় অসীম ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে। আমাদের মাঝেই আছেন এমন কিছু মানুষ যারা ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন সবখানে সব প্রাণে। তাদের সেই ভালোবাসা যত্ন আর মায়ায় ভালোভাবে বেঁচে থাকে অসহায় ও অবহেলিত অনেক পশু পাখিও। তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সাহায্য পৌঁছে দিতে পশুপ্রেমীরা একসঙ্গে জড়ো হতে আজকাল বেছে নিচ্ছেন ফেসবুক।
সামাজিক এ যোগাযোগমাধ্যমে পশুপ্রেমীদের এমন বেশ কিছু গ্রুপ এবং পেজ আছে যার স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা অসহায় কোনো প্রাণীর খোঁজ পেলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন শহরের যেকোনো প্রান্তে। স্বেচ্ছাসেবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন অসহায় সব প্রাণীর সুস্থতা ও সুরক্ষার জন্য। কখনো এগুলোকে পোষ্য হিসেবে গ্রহণের মাধ্যমে নিশ্চিত করছেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।পোষা প্রাণী যে কেউ পছন্দ করে। মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়।
কেননা অন্য সব জীবের চেয়ে মানুষ বুদ্ধিমত্তা দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। সৃষ্টিকর্তা সব প্রাণীকে মানুষের অধীন করে দিয়েছে। এ জন্যই হয়তো সব প্রাণী মানুষের পোষ মানতে বাধ্য হয়। তবে পোষ মানিয়ে কখনো প্রাণীদের ওপর অত্যাচার করা যাবে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রাণীদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে।প্রাণীদের মধ্যে নিরীহ হিংস্রসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী রয়েছে।
প্রাণীদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে কিন্তু কিছু কিছু প্রাণীকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেসব প্রাণীর মানুষের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্ম নেয়। এ জন্যই হয়তো তারা তাদের মালিকের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। তবে কিছু অসাধু মানুষ রয়েছে যারা সামান্য লাভের আশায় প্রাণীদের ক্ষতি করে থাকে যা মোটেও কাম্য নয়। প্রাণীদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হলেও মানুষের প্রতি প্রাণীদের ভালোবাসা অতি সহজেই সবার নজরে আসে না।
যুগ পাল্টেছে সময়ের গতিতে ভালোবাসার পরিধিও বেড়েছে। ভালোবাসার বন্ধন এখন ছড়িয়ে পড়েছে মনুষ্য থেকে বন্য প্রাণীতে। শখের প্রাণীকে বশ করে ঘরে তুলে এখন আদর যত্ন দিয়ে আগলে রাখা হচ্ছে। মনুষ্য পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পশু-প্রাণীদের লালন করা হচ্ছে। পূরণ করা হচ্ছে প্রিয় পশুটির সব চাহিদা। খাওয়া দাওয়া ঘুমের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে চারদেয়ালের মাঝেই। প্রিয় পৌষ্যকে আত্মার পরম বন্ধু করে আগলে রাখছে মানুষ।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ভালোবাসায় এখন সিক্ত হচ্ছে প্রিয় পৌষ্যপ্রাণী। একেই বলে পশু প্রেম।আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু শখ থাকে। অনেকে শখ করে বাসায় কুকুর বিড়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী পুষে থাকেন। এ নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যাদের বাসায় পোষাপ্রাণী রয়েছে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অন্যদের তুলনার বেশি সুস্থ থাকেন।
মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন বাসায় ফিরে প্রিয় পোষা কুকুরের সাদর অভ্যর্থনা কিংবা বিড়ালের আদরমাখা ডাক সারা দিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে আপনার মনকে প্রফুল্ল করে দেবে, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে।গবেষণায় দেখা গেছে কুকুর বিড়াল পাখি-এমনকি গিনিপিগ লালনপালন করা ব্যক্তিরা তাদের পোষ্যকে খুবই ভালোবাসেন এবং তাদের পোষ্যও মালিককে অত্যন্ত ভালোবাসে।
পোষা প্রাণীর উপস্থিতি পালনকারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।পোষা প্রাণী থাকলে মানুষ যে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে এর পেছনে শুধু মনস্তাত্ত্বিক কারণ নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পোষ্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় রক্ত চাপ কমাতে সহায়তা করে, হৃদস্পন্দনের হার কমায় এবং শরীরে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন যেমন-করটিসল এবং ডোপামিনের কাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
যেকোনো প্রাণী তার পালনকারীকে নিঃশর্ত ভালোবাসে। পোষা প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ মানুষের শরীরে অক্সিটোসিন নামের হরমোনের মাত্রা বাড়ায় যা ‘ভালোবাসার হরমোন নামে পরিচিত। অক্সিটোসিন মানুষের মাঝে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও এই হরমোন মানুষের মাঝে সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সম্পর্কের মাঝে সহনশীলতার অভাব সামাজিক দূরত্ব একাকিত্ব মানুষের দুশ্চিন্তা উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। যদিও পোষা প্রাণী কখনো মানুষের স্থান পূরণ করতে পারে না তবুও তাদের অসীম নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং বিশস্ততা একজন মানুষের জীবনে যথার্থ সঙ্গীর মতো পাশে থাকে মনস্তাত্ত্বি¡ক যোগাযোগ বাড়াতে সহায়তা করে এবং অনুপ্রেরণা জোগায়।
এই অনুভূতিগুলো একজন মানুষের মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা এবং একাকিত্ব লাঘবে ভূমিকা রাখে।গবেষণায় দেখা গেছে পোষা প্রাণী নেই এমন মানুষের তুলনায় পোষা প্রাণী আছে এমন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য অধিক ভালো থাকে।
এবং তারা দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা এবং মানসিক অবসাদ কম তাই বলা যায় বাসায় পোষা প্রাণী রাখলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি অন্যদের তুলনায় অধিক ভালো সময় পার করবেন। এবং একটি তুলনামূলক কম মানসিক চাপ দুশ্চিন্তা এবং উদ্বিগ্নতামুক্ত জীবন উপভোগ করতে পারবেন।
শখের বশে কেউ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালছে কেউ কবুতরের মেলা বসিয়েছে বাড়ির ছাদেই। কেউ আবার দেশিবিদেশি বিড়াল বা কুকুর নিয়ে মেতে উঠেছে। কত পশু-পাখিকেই না বশে এনেছে মানুষ। খাঁচায় আটকে রাখলেও এসব পৌষ্যপ্রাণীর আদর-যত্নে কোনো কমতি হচ্ছে না। প্রিয় প্রাণীর চাহনি কণ্ঠের স্বর সবকিছুই এখন মালিকের পরিচিত।
সামান্য অসুবিধা হলেই পৌষ্যপ্রাণীকে নিয়ে ছুটে যাচ্ছে পশু ডাক্তারের কাছে। কী খাবে, কীভাবে থাকবে সব সুবিধা দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকছে। প্রিয় পৌষ্যের কান্নার শব্দে যেন মালিকেরও বুক কেঁদে উঠে। আবার পৌষ্যপ্রাণীর ছুটে বেড়ানো দেখে খেলায় মেতে উঠে মালিকও। দিনে দিনে পোষাপ্রাণীটি যেন হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। এভাবেই জমে উঠে পশুর সঙ্গে ভালোবাসার চিত্র।না এই ভালোবাসা একতরফা নয়।
শুধু মালিকই যত্ন নিচ্ছে ভালোবাসছে তা কিন্তু নয়। প্রিয় পৌষ্যপ্রাণীটিও নিজের সাধ্যমতো মালিকের খেয়াল রাখছে। আমৃত্যু মালিকের হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিচ্ছে। এ যেন এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।পাখি নিয়ে গান কবিতা, রূপকথাসহ অনেক মিথ প্রচলন আছে। পাখির বাসা থেকে ডিম নিয়ে আসা, কাকের ডিম চুরি করতে গিয়ে ঠোকর খাওয়া পাখি শিকার করা পাখি ধরাসহ আমাদের নানান বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আমাদের অনেকের অভিজ্ঞতা রয়েছে দলবেঁধে শীতের সকালে বন্দুক নিয়ে পাখি শিকার করা বক মারতে যাওয়া। এই পাখি শিকার করা কিংবা পাখিসহ অন্যান্য প্রাণী হত্যা করার কারণে আজ পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যা কমে গেছে। অনেক পাখি ও প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের দেশে বুলবুলিসহ অনেক পাখি খুব একটা দেখা যায় না সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে গেছে।তবে বর্তমানে পাখিসহ প্রাণীদের সুরক্ষায় বিশ্বের অনেক মানুষই সচেতন হয়েছেন।
তাই তো দেখা যায় বিশ্বব্যাপী প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য নানা দিবস পালিত হচ্ছে প্রতি বছর। এর মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্য দিবস পরিবেশ দিবস ইত্যাদি। এ ছাড়া পাখিসহ অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য বনভূমি জলাভূমিগুলো সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে যেখানে স্পষ্ট করে বন্যপ্রাণী পাখিসহ অন্য প্রাণী হত্যা বিক্রয় ক্রয় মাংস সংরক্ষণ পরিবহন, খাওয়া পালন করা আইনগত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলাধুলা করলে কথা বললে এবং সময় কাটালে মানসিক চাপ কমে যায়।
সারা দিনের ক্লান্তি শেষে শরীর ও মনে ফুরফুরে ভাব আসে। মন শান্ত হয়। পশু প্রেমে নিবেদিত এখন অনেকেই। তারা শুধু নিজের পোষা প্রাণীর ভাষা বা ইশারা বুঝতে পারে তা কিন্তু নয়। বাড়ির বাইরে পথে বা কোনো জঙ্গলে যেখানেই পশুদের দেখবে তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করে।
ওই সব প্রাণীর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা বোঝার চেষ্টা করে এবং সাধ্যমতো সেসব প্রাণীকে সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে পশুপ্রেমীরা। পশুরাও যেন তাদের কাছে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। এমন ভালোবাসা চিরন্তন নিষ্পাপ।ভালোবাসার মানে যদি নিঃস্বার্থতা হয় তবে হয়তো পশুর সঙ্গে পশুপ্রেমীদের এই ভালোবাসাকেই প্রকৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। ভালোবাসা দিবসে তাই পৃথিবীর সব পশুপ্রেমীর প্রতি রইল অগাধ শ্রদ্ধা।
লেখকের মন্তব্য
সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম,হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url