সবচেয়ে বেশি সোনা আছে কোন ১০ দেশে?
সবথেকে বড় সোনা উৎপাদনের খনির জন্য কোন দেশ সম্মান অর্জন করেছে কে এই খনিগুলির অধিকারী এবং এর প্রত্যেকটিতে কতখানি করে সোনা আছে চলুন দেখা যাক।
১ মুরুনতাউ গোল্ড ডিপোসিট উজবেকিস্তান এশিয়া
2016 সালে এই সোনার খনি থেকে 60টনের বেশি সোনা উৎপাদন হয়েছিল বলে এটি হয়ে যায়। বিশ্বের সবথেকে বড় একটি খনি৷ এটি পরিচালনা করে উজবেক সরকার এবং সহ অধিকারী নাভয়ি মাইনিং এই, খনিতে এখনও খননের জন্য 5000 টনের সোনা গচ্ছিত রয়েছে বলে রিপোর্ট করা আছে যেটা 25টি নীল তিমির ওজন।
২ পেউবলো ভিয়েহো, ডমিনিক্যান রিপাবলিক, দক্ষিণ আমেরিকা
পেউবলো ভিয়েহো খনিতে শুধু সোনাই নেই সাথে রূপোও আছে৷ বর্তমানে কানাডিয়ান কোম্পানি, ব্যারিক গোল্ড কর্পোরেশান এবং গোল্ডকর্প ইঙ্ক যৌথভাবে এটির অধিকারী৷ সাম্প্রতিককালে খনিটিতে, সোনার আউটপুট ছিল 36 টন।
৩ গোল্ডস্ট্রাইক ইউএসএ উত্তর আমেরিকা
নেভাদা রাজ্যে অবস্থিত এই খনিটিরও মালিক কানাডার ব্যারিক গোল্ড কর্প এবং 2016 সালে 34টল সোনার আউটপুট দিয়েছে৷
৪ গ্রাসবার্গ ইন্দোনেশিয়া এশিয়া
এলাকার ভিত্তিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনার খনি গ্রাসবার্গে সোনা তামা এবং রূপো সংরক্ষিত আছে৷
এই খনিতে মোটামুটি 20,000 মানুষ কাজ করে এবং এর যৌথ মালিকানা রয়েছে আমেরিকান কোম্পানি, ফ্রিপোর্ট ম্যাকমোরান এবং ইন্দোনেশিয়া সরকারের৷ সাম্প্রতিক উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী 33 টন সোনা, খনন করা হয়েছে৷
৫ কোর্টেজ ইউএসএ উত্তর আমেরিকা
নাভেদায় ব্যারিক গোল্ড কর্পের মালিকাধীন আরেকটি খনি কোম্পানি এবং রাজ্য উভয় দিক থেকেই কোর্টেজ সবথেকে বেশি উৎপাদক৷ গত বছরে এখান থেকে প্রায় 33 টন সোনা উৎপাদন হয়েছে৷
৬ কার্লিন ট্রেন্ড, ইউএসএ উত্তর আমেরিকা
সারা নাভেদা জুড়ে এই খনিটি বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত এবং এটি প্রথম 1983 সালে আমেরিকার নিউমোন্ট মাইনিং কর্পোরেশান দ্বারা আবিস্কৃত হয়েছিল৷ সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী এই খনি থেকে সোনার আউটপুট 30টনের কিছু কম ছিল৷
৭ অলিম্পিয়াডা রাশিয়া এশিয়া ইউরোপ
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনার খনিগুলির একটি এই খনিটিতে উৎপাদন শুরু হয় 1996 সালে এবং 2016 সালে 29.3টন সোনা উৎপাদন করে৷
৮ লিহির, পাপুয়া, নিউ গুইনিয়া
প্রশান্ত মহাসাগরের বদ্বীপগুলির কেন্দ্রের এলাকা ওশিয়ানিয়ায় এই খনিটি অবস্থিত লিহির খনির মালিক, ছিল লিহির গোল্ড লিমিটেড যারা প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকাতেও অপারেশান চালাত৷ এখন এটির মালিক অস্ট্রেলিয়ার নিউক্রেস্ট মাইনিং এই খনি থেকে 2016 সালে মোট 28টন সোনা উৎপাদন হয়েছে৷
৯ বেটু হিজাউ, ইন্দোনেশিয়া, এশিয়া
দেশী কোম্পানী অম্মন মিনারেল্স দ্বারা খনন করা হয় ইন্দোনেশিয়ার এই বেটু হিজাউ খনি থেকে গত, বছর 26.7 টন সোনা উৎপন্ন হয়েছে৷
১০ বডিংটন, অস্ট্রেলিয়া
প্রথম খনন হয় 1987 সালে কিন্তু 2001 সালে বন্ধ হয়ে যায়৷ যদিও 2010 সালে খননের কাজ পুনরায় শুরু, হয় এবং এটি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সবথেকে বড় সোনার খনি৷ এটির মালিক আমেরিকার নিউমোন্ট, 2016 সালে এখান থেকে প্রায় 25 টন সোনা উৎপাদিত হয়েছিল৷
বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণখনি
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে ভূ রাজনৈতিক অস্থিরতা যুদ্ধ সংঘাত এমন সব সংকটে নিরাপদ বিনিয়োগ ধরা হয় সোনাকে। বিশ্ববাজারে বাড়ে সোনার চাহিদা ও দাম।একটি দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে নাকি অচিরেই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে তা নির্ধারণেও সোনার মজুত বিশেষ ভূমিকা রাখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার ওপর আস্থা রাখে।লন্ডনভিত্তিক ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) সম্প্রতি জানিয়েছে কোন দেশের কাছে সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত আছে। এ হিসাব ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল থেকে জুন) শেষের।ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
দেশটির কাছে মজুত রয়েছে ৮ হাজার ১৩৩ দশমিক ৪৬ টন সোনা।ইউরোপের দেশ জার্মানি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। দেশটির মজুত ৩ হাজার ৩৫১ দশমিক ৫৩ টন সোনা। তৃতীয় অবস্থানে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি। দেশটির রয়েছে ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৮৪ টন সোনা। এর কাছাকাছি অবস্থানে আছে ফ্রান্স।
দেশটিতে ২ হাজার ৪৩৬ দশমিক ৯৭ টন সোনা মজুত আছে।সোনার মজুতে রাশিয়ার অবস্থান পঞ্চম। দেশটির কাছে মজুত আছে ২ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৮৫ টন সোনা।ষষ্ঠ ও সপ্তম অবস্থানে আছে যথাক্রমে চীন ও জাপান। চীনে মজুত আছে ২ হাজার ২৬৪ দশমিক ৩২ টন সোনা। জাপানে ৮৪৫ দশমিক ৯৭ টন।
আর ৮৪০ দশমিক ৭৬ টন সোনা নিয়ে ভারত আছে অষ্টম অবস্থানে।এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস ও তুরস্কের অবস্থান যথাক্রমে নবম ও দশম। নেদারল্যান্ডসে মজুত আছে ৬১২ দশমিক ৪৫ টন সোনা এবং তুরস্কে ৫৮৪ দশমিক ৯৩ টন।
তুরস্ক কিনেছে বিপুল সোনা, আরও যেসব কারণে বেড়েই চলেছে সোনার দাম
বিশ্ববাজারে গত মাসে সোনার দাম আকাশ ছুঁয়েছিল। তবে এরপর দাম কিছুটা কমেছে এই মূল্যবান ধাতুর। গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ ডলারে, যা চলতি বছরের প্রথম দিনের দামের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ দাম এখনো গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরুর পর সোনার দাম প্রায় ৬০০ ডলার বেড়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের বিশ্লেষক হ্যারি ডেম্পসির মতে, সোনার দামের এই উত্থানকে ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।সোনার দাম এখন যে কিছুটা পিছু হটেছে, তাকে সাময়িক ব্যাপার বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
কারণ বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি এখন যেদিকে যাচ্ছে, তাতে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতি ১০০ দিনে এক লাখ কোটি (এক ট্রিলিয়ন) ডলার সরকারি ঋণ বাড়ছে। ফার্স্ট ইগল ইনভেস্টমেন্টের ম্যাক্স বেলমন্ট বলছেন, মার্কিন সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি টেকসই হচ্ছে না বলে উদ্বেগ আছে।
আর সে কারণে সোনার বাজার বেশ রমরমা।যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডে বিনিয়োগ করে এখন উঁচু হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে। ডলারও এই মুহূর্তে দারুণ চাঙা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে সোনার দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিক উল্টোটিই ঘটছে। সোনার বাজার রীতিমতো জমজমাট।সোনার দাম যখন কমার কথা, তখন এর দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূলত কারণ বাজারের বড় রকমের পরিবর্তন।
পশ্চিমা নয় এমন দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখছে। তারা বিপুল পরিমাণে সোনা কিনছে এবং এর ফলেই সোনার বাজার রীতিমতো ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি মার্চ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২৯০ টন সোনা কিনেছে।
সবচেয়ে বেশি সোনা কিনেছে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩০ টন এ সময়ে সোনা কেনার দৌড়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা কিনেছে ২৭ টন।চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এখন সোনার মজুত প্রায় ২ হাজার ২৬২ টন। ২০২২ সালের অক্টোবরের পর থেকে তাদের সোনার মজুত বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
মার্চ মাসেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা কিনেছে। ফলে এ নিয়ে টানা ১৭ মাস ধরে তারা সোনা কিনে চলেছে।আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মার্কিন সম্পদ বা বন্ডে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। এসব দেশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের একটি অংশ মার্কিন বন্ডে বিনিয়োগ করে।
১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের ৭১ শতাংশই ছিল মার্কিন ট্রেজারি বন্ড। ২০২০ সালে এই হার কমে ৫৯ শতাংশ হয়েছে।মূলত রাশিয়ার বিপদ থেকে চীন শিক্ষা নেওয়ার কারণে এটা ঘটেছে। যুদ্ধকালীন যেকোনো সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের সম্পদ নিরাপদে রাখতে বেইজিং মস্কোর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট রাশিয়ার ওপর নানা রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার একটি ছিল পশ্চিমে থাকা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করা। জি ৭ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার যে আর্থিক সম্পদ জব্দ করেছে, তার মূল্যমানই ৩০ হাজার কোটি ডলার।তবে সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত রয়েছে তা দিয়ে কেনার মতো বিপুল সোনা বিশ্বে নেই।
অর্থাৎ বিশ্বে এত সোনা নেই যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ডলার বাদ দিয়ে কেবল মূল্যবান এই ধাতুতে তাদের নিজস্ব সম্পদের মজুত রাখবে। তবে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় ডলারের আধিপত্যের অবসানের যে কথা বলা হচ্ছে, সেই বাস্তবতা যে খুব বেশি দূরে নেই, সেটা হয়তো এখন বলা যায়।
কেন দ্রুত বাড়ছে সোনার দাম ডলারের সঙ্গে কী সম্পর্ক
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। মাঝে বছর দুয়েক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে সোনার দামে সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করবে বাজারে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ববাজারে সোনার দাম এখন দ্রুত বাড়ছে।এসব কারণ ছাড়াও বাজারের আর কোন কোন ঘটনা সোনার মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে, তা দেখে নেওয়া যাক।
হিন্দুস্তান টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতের বাজারেও সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। খাদহীন ১০ গ্রাম সোনার দাম দেশটির বাজারে ৬৫ হাজার ২৯৮ রুপি পর্যন্ত উঠেছে। কেবল চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম ২ হাজার ৭০০ রুপি করে বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সোনা বিক্রিতে ভাটা পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম হঠাৎ তরতর করে বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ডলার সূচকের মান পড়ে যাওয়া। বিশ্বের ছয়টি প্রধান মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের মান কত তা নির্ধারণ করতে যে ডলার ইনডেক্স বা সূচক তৈরি করা হয়েছে, সেই সূচকের মান গত মাসে কমেছে। এ মাসে ডলার সূচকের মান ১০৪ এর নিচে নেমে এসেছে, এখন তার মান ১০৩ দশমিক ৮০।
ডলারের বিনিময় হার বাড়লে সোনার দাম কমে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সোনার দাম পড়েছে, যার অন্যতম কারণ ছিল ইনডেক্স সাপেক্ষে ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরের বন্ডের সুদহার ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ওপরে উঠে যাওয়া।সোনার ব্যবহার কেবল অলংকার তৈরির মধ্যে সীমিত নয় বরং বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যাংকের সুদহার বাড়লে বা শেয়ারবাজার শক্তিশালী হলে বিনিয়োগকারীরা এসবের মধ্যে বিকল্প বিনিয়োগের মাধ্যম খুঁজে পান। তখন সোনার চাহিদা কমে। সে কারণে ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন। এখন ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস করলে বন্ডের সুদহারও কমে যাবে, সে জন্য বিনিয়োগকারীরা আগেভাগে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন।
তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সামগ্রিকভাবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে; প্রতি আউন্স সোনার দাম গত মাসে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ২ হাজার ৩২ ডলারে নেমে আসে। ভারতের বাজারেও গত মাসে সোনার দাম শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে।এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বাড়ছে যদিও ২০২৩ সালে আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম সোনা কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
গত বছর তারা সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৭ টন সোনা কিনেছে সোনার দাম বাড়ার সঙ্গে মূল্যস্ফীতির বিশেষ সম্পর্ক নেই বলেই গবেষকেরা মনে করেন। সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ হলো ভয় ও আতঙ্ক সেই ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময় থেকেই দেখা যাচ্ছে। সংকট এলেই সোনার দাম বাড়তে থাকে গোল্ড প্রাইজ ডটকমের তথ্যানুসারে, ১৯৭০ সালের সংকটের সময়।
সোনার দর আউন্সপ্রতি ৩৫ ডলার বেড়ে ৫২৫ ডলার হয়েছিল ১৯৮০ সালে সেই দর হয় ৬১৫ ডলার। ১৯৯০ সালে সেটি অনেক কমে ৩৮৩ ডলারে নেমেছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আবার অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ার পর ২০১১ সালে সোনার দর অনেকটা বেড়ে যায় তখন দাম ওঠে ১ হাজার ৯০০ ডলারে। মাঝে অবশ্য ২০১৫ সালের দিকে সোনার দাম ১ হাজার ৪৯ ডলারে নেমে এলেও বেশি দিন।
সেই দামে থাকেনি এর পর থেকে দাম কেবল বেড়েছেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ বলছে, মহামারির পর চলতি বছর সবচেয়ে কম হারে প্রবৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে মূলত এ দুই কারণেই এখন হঠাৎ সোনার দাম বাড়ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
কোন কোন দেশের কাছে সবচেয়ে বেশি সোনা আছে
একটি দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে নাকি কোনো বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, তা নির্ধারণে সোনার মজুত বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিশেষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।১৮ শতকের শেষের দিকে ও পরবর্তী শতকের উল্লেখযোগ্য সময়জুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এই স্বর্ণমান ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে।
ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থা যেসব দেশে চালু হয়েছিল, তারা তাদের নিজস্ব মুদ্রার মান নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ হিসেবে প্রকাশ করে।গত শতকের সত্তরের দশকে এ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়া হয়। তবে অনেক দেশ এখনো সোনার মজুত করে চলেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায় মূল্যবান ধাতুটির মজুতও ক্রমেই বাড়তির দিকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো আবারও নিরাপদ প্রাথমিক সম্পদ হিসেবে সোনার ওপর আস্থা বাড়াচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) সম্প্রতি জানিয়েছে, কোন দেশের কাছে সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত আছে। এই হিসাব ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) শেষে।ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোনা মজুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৮ হাজার ১৩৩ দশমিক ৪৬ টন সোনা মজুত রয়েছে।
ইউরোপের দেশ জার্মানি রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশটির মজুত প্রায় তিন হাজার টনের বেশি সোনা। জার্মানির পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের আরেক দেশ ইতালি। দেশটির রয়েছে প্রায় দুই হাজার টনের বেশি সোনা। এর কাছাকাছি অবস্থা ফ্রান্সের।তালিকায় পরের তিনটি দেশ হলো রাশিয়া, চীন ও সুইজারল্যান্ড। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও চীনের কাছে দুই হাজার টনের বেশি সোনা আছে। এক হাজার টনের বেশি সোনা আছে সুইজারল্যান্ডে।
বিক্রি করতে গেলে সোনার দাম কমে যায় কেন
সামনে যাঁরা সোনার গয়না বিক্রি করবেন, অদলবদল করবেন বা কিনবেন বলে ভাবছেন, এই লেখা তাঁদের জন্য।জানা গেছে, সোনার দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৪১ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দাম বাড়লেও সোনার চাহিদা কমে না।
তাই সোনা কিনতে গিয়ে টাকা যেন একটু হলেও কম গুনতে হয়, সে জন্য একটা উপায়ই বেছে নিচ্ছেন অনেকে সেটি হলো পুরোনো ।সোনার গয়না বদলে এবং তার সঙ্গে বাকি টাকা যোগ করে নতুন সোনার গয়না নেওয়া।আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য ওঠানামা, তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা সংকটের কারণে।বিশ্বব্যাপী সোনার দাম একেক সময় একেক রকম হয়।
মাপবিশেষে যখন যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, দেশের যেকোনো জায়গায় সে দামেই সোনা বিক্রি হয়। দেশে এই দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন সোনার দাম ছাড়াও পুরোনো সোনা বিক্রির দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেটি আজকের পুরোনো হোক কিংবা কয়েক মাসের। নিয়ম হচ্ছে, পুরোনো সোনার গয়না বিক্রি করতে গেলে কেনা দামের ২০ শতাংশ কম দেওয়া হবে। বদলাতে গেলেও একই।
তবে ক্রেতার সুবিধার্থে ব্যবসায়ীরা সোনা বিক্রিতেও দিচ্ছেন সাময়িক ওয়ারেন্টি, জানালেন বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সুলতানা জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী প্রদীপ রঞ্জন সরকার। তিনি বলেন ‘আজকে কিনে নিয়ে গিয়ে পছন্দ না হলে কোনো রকম মূল্য হ্রাস না করেই বদলে নেওয়ার সুযোগ রাখি।
সেটি কখনো তিন দিনের মধ্যে, কখনো সাত দিন সময় দেওয়া হয় তবে বেশির ভাগ দোকানে এটি শুধু বদলে নেওয়ার জন্যই প্রযোজ্য, বিক্রির ক্ষেত্রে নয়। কোনো কোনো দোকানে কেনার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে গেলেও সাধারণত কর, তৈরির মজুরি ইত্যাদি কেটে রাখা হয়।
লেখকের মন্তব্য
সবাইকে ধন্যবাদ।আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম,হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url