ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে কি করনীয়?
আজকের লেখায় কীভাবে অ্যাকাউন্ট হ্যাকের ঝুঁকি কমাবেন এবং হ্যাক হলে কী করনীয়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
পাসওয়ার্ড রিসেট?
বিভিন্ন কৌশলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে হ্যাকাররা। ফলে ব্যবহারকারীরা চাইলেই নিজেদের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি নতুন করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যায় না। ফলে অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে প্রথমেই পাসওয়ার্ড রিসেট করতে হবে।
এ জন্য ফেসবুক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ‘Forgotten password?’ অপশনে ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেওয়া মুঠোফোন নম্বর বা ই–মেইল ঠিকানা লিখতে হবে। এবার Reset Your Password অপশনে ক্লিক করলেই পাসওয়ার্ড রিসেট হবে। ফলে নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে আবার ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে।
ফেসবুকে অভিযোগ?
ফেসবুক আইডি হ্যাক করে হ্যাকাররা যদি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় দেওয়া মুঠোফোন নম্বর এবং ই–মেইল ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলে, তবে চাইলেও পাসওয়ার্ড রিসেট করে ফেসবুকে প্রবেশ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়ে ফেসবুকের কাছে অভিযোগ করতে হবে।
এ জন্য www.facebook.com/hacked ঠিকানায় প্রবেশ করে my account is compromised অপশনে ক্লিক করতে হবে। এরপর অ্যাকাউন্টটিতে থাকা মুঠোফোন নম্বর, ই–মেইল বা ব্যবহারকারীর নাম লিখে সতর্কতার সঙ্গে অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করতে হবে।
এবার ‘security check’ অপশনে ক্যাপচা (বিশেষ কোড) লিখলেই অ্যাকাউন্টটির পুরোনো পাসওয়ার্ডসহ নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন জানতে চাইবে ফেসবুক। প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই ফেসবুকের কাছে অভিযোগ জমা হবে।
অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেই জানাতে হবে?
অনেক সময় হ্যাকাররা ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বন্ধু তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের অশ্লীল মন্তব্য, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে থাকে। কেউ আবার বিপদে পড়ার কথা বলে অর্থও চায়। শুধু তা–ই নয়, সমাজ বা রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন পোস্টও দিয়ে থাকে।
আর তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলেই ফোনকল বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে ফেসবুকে থাকা বন্ধুদের বিষয়টি জানাতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো উচিত। ফেসবুক বাংলাদেশে কারা হ্যাকিং করছে কেন করছে কীভাবে বাঁচাবেন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
বাংলাদেশের সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সেলেব্রিটির ফেসবুক প্রোফাইলে হঠাৎ করে।
রিমেম্বারিং দেখাতে শুরু করে যার অর্থ তিনি মারা গেছেন ফেসবুক তাকে স্মরণ করছে। বেশ কয়েকজন অভিনয় শিল্পী, মডেল, ফেসবুক বা ইউটিউব সেলেব্রিটি এর শিকার হয়েছেন। তাদেরই একজন মডেল অভিনয় শিল্পী এবং সোশ্যাল মিডিয়া।
কীভাবে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করা হচ্ছে?
ফেসবুকের একটি বিশেষ অপশন রয়েছে - কেউ মারা গিয়ে থাকলে তার মৃত্যুর খবর ফেসবুককে জানালে, তার অ্যাকাউন্টটি 'রিমেম্বারিং' করে রাখা হবে। অর্থাৎ প্রোফাইলটি থাকবে ঠিকই কিন্তু এটি আর সক্রিয় থাকবে না, কেউ সেখানে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন এই অ্যাকাউন্টের মালিক আর বেঁচে নেই। এই সুযোগে একটি চক্র বিভিন্ন সেলিব্রেটির অ্যাকাউন্ট এভাবে বিভিন্ন পরিচিত বা জনপ্রিয়।
ব্যক্তিদের নামে ভুয়া সনদ জমা দিয়ে তাদের জন্য বিড়ম্বনার তৈরি করে। বাংলাদেশে এরকম বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন জায়েদ খান, হিরো আলম, তসলিমা নাসরিন , নাজনীন মুন্নী, গায়ক নোবেল, জেসিয়া ইসলাম এরকম হামলার শিকার হয়েছেন।
সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি গ্রুপ কোন কারণ ছাড়াই ভুয়া মৃত্যুর খবর ফেসবুকে রিপোর্ট করে এই তারকাদের বিপদে ফেলছে। একেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিপর্যস্ত করে বা অকার্যকর করে তারা আবার সেসব খবর নিজেদের ফেসবুক পাতায় ঘোষণা করে।
আবার বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে কোন অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে অসংখ্য রিপোর্ট করা হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তবে সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিশিং বা বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেয়া, দুর্বল পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে অ্যাকাউন্টের দখল নেয়ার ঘটনাই বেশি ঘটে।
ফোন বা ল্যাপটপ হারিয়ে যাওয়া, মেরামতের সময় তথ্য নেয়া, ফ্রি ওয়াইফাই এলাকায় ব্রাউজারে প্রবেশ করে পাসওয়ার্ড দেয়া। অনেকে ব্যবহার করে, এমন সব কম্পিউটারে লগইনের মাধ্যমেও ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ হাত ছাড়া হতে পারে।
বাংলাদেশে কারা হ্যাকিং করছে?
বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এরকম সবচেয়ে বেশি দাবী দেখা গেছে ব্ল্যাক ৪২০ স্প্যামিং টিমে এর ফেসবুক পাতায়। সেখানে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের ফেসবুক আইডি, ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ ডিলিট করা, অকার্যকর করার অসংখ্য ঘোষণা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ক্রাইম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জোনায়েদ আলম সরকার। বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''আমাদের অভিযানে দেখতে পেয়েছি, কিছু কিছু গ্রুপ চ্যালেঞ্জ হিসাবে, নিজেদের তুলে ধরার জন্য এসব কাজ করে। কিন্তু বড় একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা এরকম হ্যাকিংকে পেশা হিসাবে নিয়েছে।
তিনি জানান কিছুদিন আগে মাদারীপুরে একটি অভিযান চালানোর সময় তারা এমন কয়েকজনকে আটক করেছেন। যারা সেই মধ্যরাতে অভিযান চালানোর সময়ও ফেসবুক হ্যাকিংয়ের কাজ করছিল। তাদের কাছে এমন কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে, যেখানে হ্যাক করা ২৫০০/৩০০০ একাউন্টের তথ্য রয়েছে।
কেন ফেসবুক হ্যাকিং?
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে ফেসবুক হ্যাকিংয়ের বড় একটি কারণ হলো চাঁদাবাজি বা ব্ল্যাকমেইলিং করা। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই এই অপরাধী চক্র রয়েছে এডিসি জোনায়েদ আলম সরকার বলছেন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার পর হয়তো চ্যাটিং হিস্ট্রি বা প্রোফাইলে একান্ত ব্যক্তিগত চ্যাটিং, ছবি বা ভিডিও পেয়ে যায় হ্যাকাররা।
তখন সেগুলো ওই মেয়েটিকে বা ব্যক্তিতে বলে, তাদের টাকা দেয়া না হলে এগুলো ঘনিষ্ঠজনদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আবার ফেসবুক একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে, সেটা ফিরিয়ে দেয়ার জন্যও চাঁদা দাবী করা হয় তিনি বলছেন।
হ্যাকিং থেকে বাঁচতে করণীয়?
২০১৯ সালে ৫৩ কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি হয়ে যায়। গত বছরের এপ্রিল মাসে সেসব তথ্য একটি হ্যাকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেখানে ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর ও ইমেইল প্রকাশ করা হয়।
এরপর ফেসবুকের নিরাপত্তা বাড়াতে ও হ্যাকিং ঠেকাতে গত বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ফেসবুক। আগে এসব নিরাপত্তার ব্যবস্থা ঐচ্ছিক থাকলেও এখন সবাইকেই বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হচ্ছে।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে সব অ্যাকাউন্টে গুগল অথেনটিকেশন অ্যাপ ব্যবহার করা। একটি অ্যাপের মাধ্যমে নতুন কোন ডিজিটাল ডিভাইসে ফেসবুক লগইন করার সময় মোবাইলে থাকা অ্যাপ থেকে কোড দিতে হবে।
এর পাশাপাশি টেক্সট ম্যাসেজ অপশনটি রাখা যায়। কোন কারণে গুগল অথেনটিকেশন অ্যাপ কাজ না করলে মোবাইলের নম্বরে একটি কোড পাঠাবে ফেসবুক। তখন সেটি প্রবেশ করিয়ে লগইন করা যাবে।
এর বাইরে সিকিউরিটি কি ডিভাইস ব্যবহার করা যায়। তবে সেটা তৃতীয় কোন পক্ষের কাছ থেকে কিনে ফেসবুকে রেজিস্টার করিয়ে নিতে হবে। আমি পরামর্শ দেবো, ফেসবুক, ইমো, বা কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য আদান-প্রদান করা উচিত নয়। কারণ কোন কারণে এসব অ্যাকাউন্ট বেহাত হলে এগুলোই অপরাধী চক্র কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
পাসওয়ার্ড হতে হবে অন্তত ১০ সংখ্যার, যেখানে একটি বড় অক্ষর, ছোট অক্ষর ও সংখ্যার সংমিশ্রণ থাকতে হবে। কখনোই জন্ম তারিখ, নিজের নাম, ফোন নম্বর ইত্যাদি পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। ফেসবুক পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। কোথাও লিখে রাখা বা অনলাইনের অন্য কোন মাধ্যমে ব্যবহার করাও উচিত নয়। টু স্টেপ অথেনটিকেশন ব্যবস্থা চালু থাকতে হবে।
তাহলে কেউ পাসওয়ার্ড পেলেও ব্যবহারকারীর মোবাইল থেকে কোড না পেলে ফেসবুকে প্রবেশ করতে পারবে না। ইমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হলেও, দুটার পাসওয়ার্ড আলাদা হওয়া উচিত। তাহলে কোন একটির নিয়ন্ত্রণে পেলেও হ্যাকাররা অন্যটির নিয়ন্ত্রণ সহজে নিতে পারবে না।
কোন নতুন ডিভাইসে লগইন করলে ব্যবহার শেষে আবার লগআউট করে রাখতে হবে। পাবলিক প্লেসের ওয়াইফাই ব্যবহার করে ফেসবুকে লগইন না করাই ভালো। ফেসবুকে প্রতারণা ব্ল্যাকমেইলিং বা হুমকির শিকার হলে কোনরকম সমঝোতা না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।
কী করলে ইউটিউব-ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বেশি পাওয়া যায়?
বিজ্ঞাপন পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে চ্যানেল বা পেইজের নিজেদের করার কিছু নেই। কনটেন্টের ধরণ, সেটা দেখার প্রবণতা, দেশ ইত্যাদি বিচার ইউটিউব বা ফেসবুক স্বয়ংক্রিয় ভাবে বিজ্ঞাপনগুলো দেবে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ইউটিউবকে দেয়। ইউটিউব আবার সেসব পণ্যের সম্ভাব্য বাজার বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে।
চ্যানেলের মোট কতজন সাবস্ক্রাইবার রয়েছেন, সেটা ততোটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি তারা চ্যানেলটি নিয়মিত না দেখেন। কারণের চ্যানেলের আয় নির্ভর করে বিজ্ঞাপনের ওপর। চ্যানেলের ভিউ যতো বাড়বে, চ্যানেলটি ইউটিউব থেকে ততো বেশি বিজ্ঞাপন পেতে শুরু করবেন আর আয় ততো বাড়বে।
ইউটিউবের নিয়ম অনুযায়ী, আট মিনিটের কম ভিডিওতে যে পরিমাণ অর্থ আসে, আট মিনিটের বড় ভিডিওতে তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ পাওয়া যায়। ফেসবুকেও তিন মিনিটের বড় ভিডিওগুলোয় বেশি অর্থ আয় হয়। একমিনিটের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়, তবে তার অর্থমূল্য কম। একই ভিডিও একই সঙ্গে ফেসবুক ও ইউটিউবে শেয়ার করা যায়, সাধারণত সব ইউটিউবার এটা করে থাকেন। সেখানে মানুষ কতটা দেখছে, কতক্ষণ ধরে দেখছে, এর ওপর বিজ্ঞাপন বাড়ে বা কমে।
ক্রিয়েটিভ যারা আছেন তাদের জন্য এটা খুব ইজি। এবং চাইলেই তারা ফেসবুকে কন্টেন্ট আপলোড করে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারে। আর এর জন্য সব সময় বড় ধরণের ইনভেস্টমেন্টেরও প্রয়োজন হয় না। এই আমার কথাই ধরেন। আমি শুধুমাত্র আমার স্মার্ট ফোন আর একটা লাইট ব্যবহার করি। এটাই আমার লাইফটাইম ইনভেস্টমেন্ট।
ফেসবুকে প্রতারণা আমেরিকান সৈন্য সেজে টাকা হাতিয়ে নিতো নাইজেরিয়ান চক্র?
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্ব করার পর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে ঢাকায় সিআইডি পুলিশ ১৫ জন নাইজেরিয়ান নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক মাধ্যমে কখনও নারী বা কখনও পুরুষ সেজে আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা। পরিচয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে বন্ধু বানানোর পর উপহার দেয়ার লোভ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরণের প্রতারণার অভিযোগে এ পর্যন্ত দেড় মাসে ৪০জনের বেশি নাইজেরিয়ানকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঢাকায় সর্বশেষ যে ১৫জন নাইজেরিয়ানকে ধরা হয়েছে, তাদের শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে এই চক্রের প্রতারণার নানা তথ্য তুলে ধরেছে সিআইডি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের সকলেই পুরুষ কিন্তু তারা ফেসবুকে নারী সেজে পুরুষদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন। তারা আমেরিকান সেনা বাহিনীর নারী কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিতেন। আবার নারীর সাথে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে তারা পুরুষ পরিচয়েই তা করতেন।
বন্ধুত্ব কিছুটা আবেগের জায়গায় পৌঁছালে তারা লোভ দেখিয়ে প্রতারণা জাল ফেলতেন। তারা কখনও আফগানিস্তান, কখনও সিরিয়ায় আমেরিকান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে যুদ্ধে রয়েছেন। এমন সব পরিচয় দিয়ে বানানো বন্ধুদের বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে। এমন অভিনব নানান তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাইল হায়দার।
তিনি বলছেন ফেসবুক আইডি বা ফেক আইডি ব্যবহার করে তারা আমেরিকা বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব করে। এই শুরুটা হয় একটা হার্মলেস মানে নির্ভেজাল বন্ধুত্ব সম্পর্ক আরকি। ট্রাস্ট বিল্ডিংটা হয়, তারপর প্রলোভনের পর্যায়টা আসে। ডলার, স্টোন বা দামি কোন উপহার দেবে, তার ছবি দেখিয়ে প্রতারণায় ফেলে।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ এই চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন, এমনই একজন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ফেসবুকে বন্ধু হওয়ার পর কয়েক ধাপে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেয়ার পর তার সন্দেহ হয় যে, তিনি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।
ফেসবুক ব্যবহারে সাবধানতা আইডি হ্যাক হলে করণীয়?
আরএমপি নিউজঃ বর্তমানের একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফেসবুক ব্যবহারে রীতিমতো আসক্ত হয়ে পড়ছে এর ব্যবহারকারীরা। বর্তমানে আমাদের দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তাই এখানে নানা কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে প্রতারক চক্র। প্রতারকেরা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিয়ে তা ফেরত দেওয়ার কথা বলে টাকাও দাবি করে থাকে।
কখনো কখনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেই অনাকাঙ্ক্ষিত বা অপরাধমূলক কিছু পোস্ট করে, যা আপনাকে বিপদ ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলে দেয়। অনেকে এর শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কী করবেন অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠাবেন।
কীভাবে বার্তা পাঠানো যায়, সেই অপশনগুলো ফেসবুকেই পাবেন। সাধারণত ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয় না। তাদের কাছে কিছু তথ্যপ্রমাণ পাঠাতে হয়। ওরা সেগুলো নিয়ে খতিয়ে দেখবে, আপনার দাবি সঠিক কি না। আর সেই সময়ের মধ্যেই কিন্তু প্রতারক চক্র আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তা পোস্ট করে।
তাই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা হলো পুলিশকে জানানো। দ্রুত আপনি কাছের থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। এই জিডি আপনাকে যেকোনো ঝামেলা এড়াতে আইনি সুরক্ষা দেবে।
ফেসবুক ব্যবহারে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ম কানুন ভালভাবে না জানার ফলে ফেসবুক হ্যাক হয় বিধায় অনেককেই নানা হয়রানী ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। তাই ফেসবুক ব্যবহারে সচেতনতা জরুরী নিরাপদ ফেসবুক ব্যবহারে আপনার করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছে ডিএমপি নিউজ।
1 পাসওয়ার্ড রক্ষা করতে হবে?
কখনও আপনার পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করা যাবেনা এমন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন যা অনুমান করা কঠিন। কখনই নিজের নাম বা সাধারণ শব্দ পাসওয়ার্ড এ ব্যবহার করা উচিত নাফেসবুক পাসওয়ার্ডটি শুধু মাত্র ফেসবুকের জন্য ব্যবহার করা উচিত। অন্য কোন সিকিউরিটির ক্ষেত্রে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে তা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
2। অন্য কেউ যেন আপনার ফেসবুক একাউন্টে লগ ইন করতে না পারে তাই অতিরিক্ত নিরাপত্তা (Login Approvals) ব্যবহার করতে পারেন। এই জন্য ফেসবুকের Two step verification পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
3। ই-মেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে হবে
4। ব্যবহার শেষে ফেসবুক একাউন্ট থেকে অবশ্যই লগ আউট করতে হবে।
5। নিউজ ফিডে অথবা মেসেঞ্জারে সন্দেহজনক কোন লিঙ্ক দেখলে সাথে সাথে রিমুভ করে দিতে হবে। নিশ্চিত না হয়ে যেকোন গেম, অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যদের পাঠানো কোনো লিঙ্কে ক্লিক করা উচিত না।
6। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিকল্প ই-মেইল আইডি যুক্ত করুন। যদি আপনার প্রোফাইল কোন কারনে হ্যাকও হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার দ্বিতীয় ইমেইলে আপনার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য তথ্য পাঠাবে।
7। অপরিচিত কারোর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার আগে তার প্রোফাইল চেক করে নিতে হবে।
8। একেবারে ব্যক্তিগত কোন ছবি, তথ্য(ফোন নাম্বার, ঠিকানা, ই-মেইল এড্রেস ইত্যাদি) ফেসবুকে শেয়ার করা উচিত না।
9। আপনার পোস্ট কারা দেখতে পারবে তা সতর্ক ভাবে নির্বাচন করতে হবে।
10। পাবলিক কম্পিউটারে (সাইবার ক্যাফে, ল্যাব ইত্যাদি) ফেসবুক ব্যবহার না করাই ভাল। তবে ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারের পর লগ ইন হিস্টোরি মুছে দিতে হবে।
পোস্ট ট্যাগ?
ফেসবুক হ্যাকের মাধ্যমে হয়রানি কিংবা বিড়ম্বনার শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করুন এবং জিডি অথবা মামলা করুন।
হ্যাকিং ঠেকাবেন যেভাবে?
আপনি হয়তো মেসেঞ্জারে একটি লিংক পেলেন যাতে লেখা ওএমজি জানো কে মারা গেছে আপনি, লিংকে ক্লিক করলেন। দেখলেন প্রায় ফেসবুকের মতো দেখতে একটি ইন্টারফেস, কিন্তু আপনাকে আবারও লগইন করতে বলা হচ্ছে। আপনি কিছু না ভেবেই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলেন। ব্যাস! আপনার পাসওয়ার্ড অন্য কেউ জেনে গেলো। কারণ ফেসবুক মনে করে যে ওয়েবসাইটে আপনি আপনার আইডি পাসওয়ার্ড দিলেন, সেটি আসলে ফেসবুক নয়।
লেখকের মন্তব্য?
সবাইকে ধন্যবাদ আজকের মতো এখানেই বিদায় নিলাম,হাজির হবো আরও নিত্য নতুন টিপস নিয়ে আমি রবিউল ইসলাম আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url